বাংলা সাহিত্যজগতে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অতিপরিচিত এক নাম। তিনি ২৪ জুলাই ১৮৯৮ সালে বীরভূমের লাভপুরে জন্মগ্রহণ করেন। আমৃত্যু তিনি সাহিত্য রচনায় মগ্ন ছিলেন এবং আধুনিক কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

১৯২১ সালে কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে আই.এ অধ্যয়নকালে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেন এবং কারাবন্দি হন। পরবর্তীকালে ১৯৩০ সালে পুনরায় তিনি এক বছর কারাবাস ভোগ করেন। কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি সম্পূর্ণভাবে সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। বীরভূম ও বর্ধমান জেলার মাটি ও মানুষের কথা তাঁর রচনায় প্রকট ছিল। এছাড়া ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, দাঙ্গা, দেশভাগ, দুর্ভিক্ষ, অর্থনৈতিক বৈষম্য ইত্যাদি তাঁর রচনার উল্লেখযোগ্য বিষয়। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন একাধিক ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ-সংকলন, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনি। এমনকি তিনি সাহিত্যজগতে প্রবেশ করেন কবিতা লেখার মাধ্যমে, যদিও তাঁর প্রথম পরিচয়―তিনি একজন ঔপন্যাসিক।
‘দুই পুরুষ’, ‘কালিন্দী’, ‘জলসাঘর’, ‘গণদেবতা’, ‘আরোগ্য নিকেতন’, ‘পঞ্চগ্রাম’, ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’―প্রভৃতি তাঁর অমর সৃষ্টি। এছাড়া তাঁর উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘পাষাণপুরী’, ‘রাইকমল’, ‘সপ্তপদী’, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’, ‘ভুবনপুরের হাট’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। তারাশঙ্করের গল্প-উপন্যাস ও নাটক নিয়ে চল্লিশটিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে―‘দুই পুরুষ’, ‘চাঁপাডাঙার বৌ’, ‘কালিন্দী’, ‘রাইকমল’, ‘জলসাঘর’ ও ‘অভিযান’। ‘জলসাঘর’ ও ‘অভিযান’ চলচ্চিত্রের নির্মাতা ছিলেন বিখ্যাত লেখক ও চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়।

১৯৫৫ সালে ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসের জন্য তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ পান। একই উপন্যাসের জন্য ১৯৫৬ সালে তিনি ‘সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার’-এ ভূষিত হন। এছাড়া ‘গণদেবতা’ উপন্যাসের জন্য ১৯৬৭ সালে তিনি ‘জ্ঞানপীঠ সাহিত্য পুরস্কার’ পান। ১৯৬২ ও ১৯৬৮ সালে তিনি যথাক্রমে ‘পদ্মশ্রী’ ও ‘পদ্মভূষণ’ উপাধি লাভ করেন।

১৯৭১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মহান এই কথাসাহিত্যিক মৃত্যুবরণ করেন।