বাঙালি নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া ছিলেন একাধারে লেখক, শিক্ষাবিদ ও সমাজ সংস্কারক। তাঁর জন্ম ১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুরের পায়রাবন্দ গ্রামে। তাঁর জীবনের পরিধি ছিল মাত্র বায়ান্ন বছর; কিন্তু অর্জন অসামান্য।

বেগম রোকেয়া তাঁর মুক্তচিন্তা, ধর্মনিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, নারী জাতির প্রতি নিজের দায়িত্ববোধ ও শানিত লেখনীর মাধ্যমে এক বিরল অবিস্মরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাঁর রচিত গ্রন্থের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি কিন্তু এই কয়েকটি গ্রন্থই তাঁকে লেখক হিসেবে অপরিমেয় সম্মান ও স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। গ্রন্থসমূহ হলো: ‘মতিচূর ১ম খণ্ড’, ‘মতিচূর ২য় খণ্ড’, ‘সুলতানার স্বপ্ন’, ‘পদ্মরাগ’ ও ‘অবরোধ-বাসিনী’।
বেগম রোকেয়ার সাহিত্যকর্ম নারীদের মনের বন্ধ দুয়ার খুলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। ‘সুলতানার স্বপ্ন’, গ্রন্থটিতে তিনি এমন একটি নারীসমাজের কথা বলেছেন যেখানে জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারীরা পুরুষের চেয়ে এগিয়ে থাকবে, নারীরা রাষ্ট্রের সকল কার্য পরিচালনা করবে। অন্যদিকে পুরুষরা ঘরে বন্দি থাকবে।

নারীশিক্ষার বিস্তারে তাঁর অবদান অপরিসীম। ১৯০৯ সালে ভাগলপুরে তিনি সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত বাংলার নারীশিক্ষা বিষয়ক একটি সম্মেলনে তিনি সভাপতির ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৭ সালে অনুষ্ঠিত নারীশিক্ষা সম্মেলনে তিনি বাংলা ভাষার পক্ষে বক্তব্য দেন, যা তৎকালীন মুসলিম সমাজে খুবই দুঃসাহসিক একটি কাজ ছিল।
তিনি মুসলিম বাঙালি নারীদের কল্যাণের জন্য মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন যেখান থেকে তিনি অসহায়, বিধবা ও দরিদ্র নারীদের সাহায্য করতেন। এই সমিতি নারীদের বিভিন্ন অধিকার, যেমন রাজনৈতিক অধিকার, শিক্ষার অধিকার, অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ও কর্মসংস্থান এবং আইনগত অধিকার পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

১৯৩২ সালের ৯ ডিসেম্বর এই মহীয়সী নারীর মৃত্যু হয়। বাংলাদেশে বেগম রোকেয়ার জন্ম ও মৃত্যুদিবস ৯ ডিসেম্বর ‘রোকেয়া দিবস’ হিসেবে উদ্যাপিত হয়। শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক রোকেয়ার মৃত্যুতে বলেন, “She was one of those gifted people who raised their own memorial by their own hands in their own life time.” (‘A. K. Fazlul Haq’s Speech’, The Amrita Bazar Patrika, 15 December 1932— উদ্ধৃত: রোকেয়া প্রয়াণলেখ: সাময়িকপত্রের সাক্ষ্য ও অন্যান্য, সংকলন-সম্পাদনা-ভূমিকা: আবুল আহসান চৌধুরী, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা ২০২৪।