বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা: অর্পিত সম্পত্তির সাথে বসবাস
মানব পুঁজি গঠনের ক্ষেত্রে জাতীয় ক্ষতি হয়েছে অপরিমেয়। যার মধ্যে আছে হিন্দু সংখ্যালঘুদের জোরপূর্বক গণহারে দেশত্যাগে বাধ্য করা, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে দেওয়া, অন্যায় নিষ্পেষন ও পারস্পরিক অবিশ্বাস, মর্মবেদনা, মানবিক সম্ভাবনাগুলোর ক্ষয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত হওয়া, স্বাধীনতাহীনতা, সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা, সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে ইন্ধন জোগানো এবং ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ইত্যাদির মাঝে সুস্পষ্ট। এসবই হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতাহীনতা, অসহায়, শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা, দারিদ্র্য ও বিচ্ছিন্নতা বঞ্চনার এক চিরস্থায়ী চক্র সৃষ্টি করেছে।
আবুল বারকাত, পিএইচডি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের স্বনামধন্য অধ্যাপক। মানব উন্নয়নের রাজনৈতিক-অর্থনীতি বিষয়ে নির্মোহ গবেষণা তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে।তাঁর তিন শতাধিক গবেষণাকর্ম এবং ভূমি অধিকার, দারিদ্র্য, মানব বঞ্চনা ও মানব উন্নয়ন বিষয়ে অসংখ্য মননশীল প্রকাশনা রয়েছে। দারিদ্র্য ও মানব উন্নয়ন, উন্নয়নে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অধিকার, জমি-দারিদ্র্য-উন্নয়নের আন্তসম্পর্ক, অর্থনীতি ও রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, মৌলবাদের অর্থনীতি, উন্নয়নে জেন্ডার বৈষম্য এবং জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে তাঁর গভীর, সত্যানুসন্ধানী গবেষণাকর্ম দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বিশেষ সমাদৃত হয়েছে। তিনি Char land in Bangladesh; Political Economy of Ignored Resource; Political Economy of Khas land in Bangladesh; Political Economy of Land Litigation in Bangladesh; A Case of Colossal National Wastage; Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh; Living with Vested Property; Life and Land of Adibashis; Land Dispossession and Alienation of Adibashis in the Plain Districts of Bangladesh ইত্যাদি মৌলিক গবেষণা গ্রন্থের প্রধান রচয়িতা। ঋদ্ধিমান ও অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সমাজ-রাজনীতি বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ ড. বারকাত দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, মানব উন্নয়ন হলো স্বাধীনতা ও চেতনায়ন মধ্যস্থতাকারী প্রক্রিয়া। সেই অর্থে তাঁর গবেষণার মূল অন্বেষা মানব উন্নয়নের নৈতিক এবং আদর্শিক বিষয়। নাগরিক কর্মকান্ডে তাঁর অগ্রণী ও সাহসী ভূমিকা সমাজের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণা। অধ্যাপক আবুল বারকাত বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি (২০১০-২০১২)। সাদেকা হালিম, পিএইচডি, বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। ড. হালিম জেন্ডার এবং উন্নয়ন, বিশেষ করে, আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিষয়ে সুপরিচিত গবেষক। বন, জেন্ডার, নারী ও শিশু পাচার, নারী ও পল্লী বিদ্যুতায়ন এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে তাঁর গবেষণার আগ্রহ পরিব্যাপ্ত। তিনি পঞ্চাশেরও বেশি গবেষণা প্রকাশনার কৃতিত্বের অধিকারী ও একজন সক্রিয় নারী অধিকার কর্মী। অভিজিৎ পোদ্দার, পিএইচডি, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)-এর গবেষণা পরিচালক। তিনি Deprivation of Hindu Minority in Bangladesh; Living with Vested Property গবেষণা গ্রন্থের সহ-গ্রন্থকার। আসমার ওসমান, এমএসএস, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)-এর পরামর্শক। উন্নয়ন অর্থনীতি এবং উন্নয়নের নানা ভাবনা-অনুষঙ্গ নিয়ে গবেষণায় তাঁর কুশলতা ইতোমধ্যেই প্রশংসিত হয়েছে। তিনি Life and Land of Adibashis; Land Dispossession and Alienation of Adibashis in the Plain Districts of Bangladesh গবেষণা গ্রন্থের সহ-রচয়িতা। মো: বদিউজ্জামান, এমএসএস, হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি)-এর গবেষণা সহযোগী
শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের যাঁতাকলে ১২ লাখ হিন্দু পরিবার ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি হারিয়েছেন। অমানবিক এই সমস্যাটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে ৪২ বছর যাবৎ জিইয়ে রাখা হয়েছে। সমস্যাটি মনুষ্য সৃষ্ট কিন্তু মনুষ্যত্ববিরোধী। বিষয়টিকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে দেখতে হবে। সমাধানে মানব উন্নয়নে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাসী প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সাথে কৃষক সংগঠনসহ বিভিন্ন স্তরের সচেতন নাগরিক সমাজকে পূর্ণমাত্রায় সম্পৃক্ত করতে হবে। সমস্যার সমাধানে ভূমি অফিসের চেয়ে অনেক বেশি নির্ভর করতে হবে জনগণের প্রবল আত্মশক্তির ওপর। মনুষ্য সৃষ্ট এ মহাবিপর্যয় থেকে উত্তরণ জরুরি। মহাবিপর্যয় উত্তরণে দুটি বিষয়ে সম্মিলন প্রয়োজন : ১) উষ্ণ-হৃদয় অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন সাহসী নেতৃত্ব এবং ২) সমগ্র প্রক্রিয়ায় জনগণের সুদৃঢ় অংশগ্রহণ। -আবুল বারকাত সংশ্লিষ্ট জাতীয় বিপর্যয়টি এমনি যে, গত চার দশকে (১৯৬৫-২০০৬ সময়কালে) ২৭ লক্ষ হিন্দু খানার মধ্যে ১২ লক্ষ খানা বা হিন্দু ধর্মের ৬০ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ এবং ব্যাপকভাবে শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন; হারিয়েছেন ২৬ লক্ষ একর ভূ-সম্পত্তি। ভূ-সম্পত্তির পাশাপাশি হারিয়েছেন অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। অর্পিত সম্পত্তি আইনে মোট আর্থিক ক্ষতির মূল্যমান (৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৭৫ ভাগের সমপরিমাণ (২০০৭ সালের মূল্যের ভিত্তিতে)। এ আইন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মূল চেতনা এবং সাংবিধানিক ‘সমতা, ন্যায্যতা, স্বাধীনতা এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার’ ইত্যাদি চেতনার পরিপন্থী। এ আইন সাম্প্রদায়িক, অমানবিক এবং অগণতান্ত্রিক। বাংলাদেশে মানব উন্নয়নের জন্য একটি সত্যিকারের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিলসহ এ আইনে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকৃত মালিক এবং/অথবা উত্তরাধিকারীদের কাছে সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
Reviews
There are no reviews yet.
Be the first to review “বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা: অর্পিত সম্পত্তির সাথে বসবাস” Cancel reply
Reviews
There are no reviews yet.