আজকের এ বইতে যা আছে, ক্রনলজি বা ক্রমিকতার বিচারে আমি লাভ করেছি একেবারে আমার গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথম পর্বে। প্রথম দিকে আমার নানা প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। তিনিও ধৈর্যের সঙ্গে তার উত্তর দিতেন। কিছু কিছু জিনিস যখন তিনি আম দরবারে মসজিদের খুতবায় বলতে শুরু করলেন তখন প্রশ্ন করেছিলাম এসব জিনিস তো পীর সাহেবরা আম দরবারে বলেন না। তিনি হেসে জবাব দিলেন আমরা এখন সালেহীনদের জমানায় আছি। সুতরাং সাধারণ মুসল্লিরা যদি এতে উপকৃত হন ক্ষতি কি?
প্রফেসর মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ১৯৩৯ সালে আসামের তিনশুকিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাল্যকাল কাটে চট্টগ্রাম এবং গ্রামের বাড়ি নবিনগর থানার মেরাতুলি গ্রামে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন যথাক্রমে ১৯৬০ ও ১৯৬১ সালে। তিনি ১৯৬২ সালে সরকারি কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন । ১৯৬৪ সালে তিনি সরকারি স্কলারশিপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন । তিনি সেখানে ইংরেজি সাহিত্যে ট্রাইপস করেন এবং ১৯৬৬ সালে বি.এ. অনার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে সরকারি চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসেন। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক নিযুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি এসিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালে তাকে বাংলা একাডেমীর সভাপতি হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি সার্ভিসের আন্তর্জাতিক কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরির সঙ্গে তাঁর প্রথম পরিচয় ১৯৮৮ সালের দিকে। এরপর তিনি তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর জীবনে তাতে এক আমূল পরিবর্তন আসে। তিনি হুজুর জৌনপুরির বক্তৃতার নোট নিয়েছেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। এর ফলে তিনি এক বিপুল রত্নভান্ডার পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন। গত বছর হুজুর জৌনপুরির স্মারকগ্রন্থটি পাঠক সমাবেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এ বছরের মেলায় তার দুটি গ্রন্থকথামৃত সাগর ও মহানবির জীবনের অলৌকিক ঘটনাবলি প্রকাশিত হতে যাচ্ছে। দুটি গ্রন্থেই সুফিবাদ সর্ম্পকে আগ্রহী পাঠকদের জন্য যথেষ্ট আকর্ষণীয় উপকরণ রয়েছে।
আজকের এ বইতে যা আছে, ক্রনলজি বা ক্রমিকতার বিচারে আমি লাভ করেছি একেবারে আমার গুরুর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রথম পর্বে। প্রথম দিকে আমার নানা প্রশ্ন ছিল তাঁর কাছে। তিনিও ধৈর্যের সঙ্গে তার উত্তর দিতেন। কিন্তু একদিন বুঝতে পারলাম যে তিনি আসল মানিক। তাঁর খোঁজই আমি সারা জীবন করে আসছি। তিনিও আমার অপেক্ষাতে ছিলেন। এ তো নিয়তির বন্ধন যা ঠিক হয়েছিলো আমার জন্মের লক্ষ বছর আগে থেকেই। তাই তাঁর কাছে আমার নিঃশর্ত আত্মসমর্পন। তাঁর কাছে এসেই বুঝলাম আমি পৌঁছে গেছি এক অন্তহীন মহাসাগরের তীরে। সেটা অষ্টাশি সালের কথা। তারপর তাঁর পায়ের কাছে কাটিয়ে দিয়েছি তেরটি বছর। কেন জানি না প্রথম থেকেই তাঁর কথা ডায়রিতে টুকে রাখতাম। তাঁর কথা সম্পর্কে লিখতে শুরু করলাম কিন্তু ১৯৯৬ সালের দিক থেকে। প্রথমে বাংলাবাজার পত্রিকায়। তারপর একে একে সংলাপ সিরিজের বইগুলো প্রকাশিত হলো। কিন্তু এ সব বইতে বক্ষ্যমাণ বইয়ের গূঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে লিখিনি। এ বইতে মূল আলোচ্য বিষয় হলো ইলমে ইরফান বা গূঢ়তত্ত্ব। এর বেশির ভাগই তিনি ডিওএইচএস-এর মারকাজে তাঁর কিছু নির্বাচিত শিষ্যকে শিখিয়েছেন। কিছু কিছু জিনিস যখন তিনি আম দরবারে মসজিদের খুতবায় বলতে শুরু করলেন তখন প্রশ্ন করেছিলাম এসব জিনিস তো পীর সাহেবরা আম দরবারে বলেন না। তিনি হেসে জবাব দিলেন আমরা এখন সালেহীনদের জমানায় আছি। সুতরাং সাধারণ মুসল্লিরা যদি এতে উপকৃত হন ক্ষতি কি?
Reviews
There are no reviews yet.
Be the first to review “সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি (রহ:)-এর সুফীতত্ত্ববোধিনী: কথামৃত সাগর” Cancel reply
Reviews
There are no reviews yet.