বাঙালির সামাজিক পদবীর ইতিবৃত্ত অনুসন্ধান এ গ্রন্থ রচনার অন্যতম অভীষ্ট। বাঙালির নামের সাথে তার বংশ বা সামাজিক পদবীর একটি অংশ জুড়ে আছে। পদবীর সামাজিক উপযোগিতা এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে বলে সেকালের মতো এ কালেও পদবীসমূহ কমবেশি সামাজিক অবস্থানের পরিচয় নির্দেশ করে। ফলে ‘পদবী’ নামক বাঙালির এ অভিধাটি নামের অনেকটা অপরিহার্য অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নামের শেষে এই সামন্ত-সামাজিক পদবীর উদ্ভব ও বিকাশের ইতিহাস অনুসন্ধান প্রচেষ্টা ‘বাঙালির সামাজিক পদবীর ইতিহাস’ গ্রন্থটির মূল উপজীব্য।
বাঙালির বিভিন্ন বংশ ও সামাজিক পদবীর ইতিবৃত্ত অন্বেষণ মূলত সামাজিক নৃতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক অনুসন্ধানের বিষয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে উৎপত্তির উৎস নির্ধারণের ধারাটি আমাদের দেশে অনেকটা অবহেলিত। এ বিষয়ে গবেষণা কাজও তেমন হয়নি।
সামাজিক পদবীর শেকড় অনুসন্ধানের বিষয়টি বেশ জটিল। সামন্ত-সংস্কৃতি ও কৌলিন্য প্রভাবে এবং জাতিভেদ পীড়িত সমাজ যে অস্থির ও প্রায় অবিনাশী উত্তরাধিকার নামের শেষে সংযুক্ত করে দিয়েছিল তার ব্যবহার এখনো রয়েছে।
জন্মের পর থেকে পদবীর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অনেকটা আত্মিক। ধারণা করা হয় যে, উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া এ পদবীর ইতিহাস প্রাচীন। তবে কয়েকশ’ বছরের কোনো ঘটনাকে হাজার বছরের মনে করার ধারণাটি কোনো পদবীর উৎপত্তি, ইতিহাস, প্রচলন ও প্রাচীনত্ব সম্পর্কে কখনো কখনো বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে বলে এর উৎপত্তি ও বিকাশের অনুসন্ধান জরুরি। এ কথা সত্য যে, সময়-কাল, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নামের সাথে পদবীর মূল কারণ পেশাগত; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নির্দেশ করে। লেখক এ গবেষণা গ্রন্থে তথ্য নির্দেশসহ বাঙালির সামাজিক পদবীর ব্যুৎপত্তি অনুসন্ধানের তথ্যসমৃদ্ধ একটি চমৎকার গ্রন্থ উপহার দেয়ার প্রয়াস পেয়েছেন। গ্রন্থটি অনুসন্ধিৎষ্ণু পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে বলে আশা করা যায়।
Reviews
There are no reviews yet.