লেখক দ্রাবিড় সৈকত তরুণ চিত্রশিল্পী, সমালোচক ও গবেষক—চিত্রশিল্প, দর্শন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন দেশি-বিদেশি গবেষণাপত্রে তাঁর চিন্তাশীল বেশকিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমান গ্রন্থটি এরই ধারাবাহিকতার অংশ। তিনি মনে করেন, “শিল্পকলা নিয়ে আমাদের অজস্র প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। শিল্পের সংজ্ঞা, ষড়ঙ্গ, দর্শন, সৌন্দর্য, শিল্পের বিজ্ঞান, তাল, মান, প্রকৃতি, শিল্পী ও কারিগর, শিল্পীর যোগ্যতা, শিল্পী ও তাত্ত্বিকের ব্যাধি, নগ্নতা, অলংকার, দেহ, শরীর, নারী-পুরুষ, উত্তরাধিকার, পরম্পরা, রাজনীতি বিষয়ে কোনো সাধারণ ধারণা না নিয়েই আমরা নিজেদের রসিক-ভোক্তা-শিল্পী-তাত্ত্বিক-সমালোচক ইত্যাদি অভিধায় চিহ্নিত করছি।
শিল্পকলা, শরীর এবং দেহতত্ত্ব—এরা দর্শনগত দিক থেকে আদতে আলাদা নয়; আমরা আলাদা করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছি, আমাদের প্রচলিত বিদ্যায়তনিক সংকীর্ণ পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ড এদের পৃথকভাবে, বিশেষায়িত ভঙ্গিতে দেখতে শিখিয়েছে তাই। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডকে দেহস্থিত করে আয়ত্ত করার রীতি বৃহৎবঙ্গের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বাঙলা অঞ্চলে তত্ত্বের সাথে প্রয়োগের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে, যেটি ইউরোপীয় জ্ঞানচর্চা থেকে স্বতন্ত্র।
বঙ্গীয় শিল্পকলাকে উপলব্ধি করার প্রধান সূত্র নিহিত রয়েছে বাঙলার দেহাত্মবাদী মতাদর্শের অভ্যন্তরে। দেহকে বাদ দিয়ে, আত্মাকে বাদ দিয়ে, প্রকৃতি-পুরুষের দর্শন ও বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সংযোগের চেতনাকে বাদ দিয়ে এদেশের শিল্পকে বুঝতে যাওয়া পণ্ডশ্রমের বাইরে অন্য কিছু হওয়ার পথ নেই। এ যাবৎকালে বিভিন্ন ঔপনিবেশিক প্ররোচনায় শিল্পকলাকে তার দর্শন বিচ্যুত করে দেখার চেষ্টা করা হয়েছে, যা আমাদের ভুল গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছে। বঙ্গীয় শিল্পের বিচার তাই আত্মাশূন্য বা প্রাণহীন জড়পদার্থে রূপায়িত হয়েছে। নিজের স্বরূপ সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে পারলেই মুক্ত হওয়া যায়।
আত্মজ্ঞানের শৈল্পিক রূপায়ণকে বঙ্গীয় ঘরানায় বলা হয়েছে শিল্পকলা। বঙ্গীয় শিল্পকলা তাই বঙ্গসন্তানদের প্রাণ থেকে উৎসারিত, বাস্তব পৃথিবীর প্রয়োজনের উদ্দীপনায় তার জীবনাদর্শের সাথে সম্পৃক্ত, সমাজাচরণের অংশ হয়ে বহুল প্রচারিত দেহতত্ত্বের দার্শনিক এবং নান্দনিক উত্তরাধিকার ও পরম্পরা।”
আশা করা যায়, গ্রন্থটি শিল্পবোদ্ধা এবং শিল্পানুরাগীদের চিন্তার খোরাক জোগাবে।
Reviews
There are no reviews yet.