আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প বলার ধরনটি―একাডেমিক বর্ণনায় তার স্টাইল, তার শৈলী―বেশ আকর্ষণীয়। গল্পের ভেতর অঞ্চলটা সচল এবং স্থিতিস্থাপক করার জন্য তিনি বর্ণনাকারীর কণ্ঠ ঘন ঘন পরিবর্তন করেন। উত্তম পুরুষে বর্ণনা, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর বর্ণনা, তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা প্রভৃতি একই গল্পে ব্যবহার করেন। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী থেকে উত্তম পুরুষে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়টা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। একই ঘটনার ক্রমে, ঘড়িকে তোয়াক্কা না করে গল্পের কণ্ঠকে বদলে দেন কামাল। তাতে সময়টা এগোয় আঁকাবাঁকাভাবে, কখনো ধীরে কখনো লাফিয়ে-লাফিয়ে। গল্পের শুরুতে―শুরুর লাইনটিতেই বস্তুত, একটা চমক থাকে। বোঝা যায়, কামাল তার নিজের একটি গল্পভাষা তৈরি করেছেন, যাতে কার্যকারণের সূত্রগুলো তিনি নিজের মতো সাজিয়ে দেন। একটা গল্পের ভেতরে আরেকটা গল্প, তার ভেতরে আরেকটা গল্প, এরকম রাশান মিশকা পুতুলের মতো অথবা আমাদের লোক-গল্পের প্রাণ ভ্রমরার বাক্সের মতো একেকটা পরতে কাহিনি বিন্যস্ত করেন তিনি।
আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগুলি পড়লে কার্নিভালের মতো বহুবিচিত্র একটি জগৎ, তার পলিগ্লোসিয়া―বহু-কণ্ঠ―গভীর সব দ্যোতনা, প্রতীক, অ্যাবসার্ড, পরাবাস্তব মনের ভেতরে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়। কামালের গল্পে প্রচুর প্রতীক থাকে। যেমন ‘অন্ধকার’; এটি অবশ্যই একটি পুরনো, এমনকি ক্লিশে হয়ে যাওয়া উৎপ্রেক্ষা/প্রতীক; কিন্তু পুরনোতে/ক্লিশেতে যে ক্লান্তি থাকে, নিষ্ক্রিয়তা থাকে, তা কামালের এই―এবং এর মতো অসংখ্য―পুরনো প্রতীকে/বর্ণনায়/মেটোনিমিতে নেই। এর কারণ―পুরনোকে একটা নতুন, সমসাময়িক ব্যাখ্যা দেন কামাল। অথবা পুরনো-নতুনের একটি অসম দ্বন্দ্বে তিনি কিছু অসঙ্গতি, ফাঁকি, আয়রনির আভাস দেন যা উত্তর-আধুনিক গল্পের মতো শেষ পর্যন্ত আত্মবোধক হয়ে দাঁড়ায়―আর আমাদের চিরাচরিত মূল্যবিচার, উচ্চ-নিচের প্রভেদ আর নিশ্চয়তা-চূড়ান্ততাকে মাথার ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। -সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম
Reviews
There are no reviews yet.