গল্পসংগ্রহ ২

আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প বলার ধরনটি―একাডেমিক বর্ণনায় তার স্টাইল, তার শৈলী―বেশ আকর্ষণীয়। গল্পের ভেতর অঞ্চলটা সচল এবং স্থিতিস্থাপক করার জন্য তিনি বর্ণনাকারীর কণ্ঠ ঘন ঘন পরিবর্তন করেন। উত্তম পুরুষে বর্ণনা, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর বর্ণনা, তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা প্রভৃতি একই গল্পে ব্যবহার করেন। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী থেকে উত্তম পুরুষে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়টা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। একই ঘটনার ক্রমে, ঘড়িকে তোয়াক্কা না করে গল্পের কণ্ঠকে বদলে দেন কামাল। তাতে সময়টা এগোয় আঁকাবাঁকাভাবে, কখনো ধীরে কখনো লাফিয়ে-লাফিয়ে। গল্পের শুরুতে―শুরুর লাইনটিতেই বস্তুত, একটা চমক থাকে। বোঝা যায়, কামাল তার নিজের একটি গল্পভাষা তৈরি করেছেন, যাতে কার্যকারণের সূত্রগুলো তিনি নিজের মতো সাজিয়ে দেন। একটা গল্পের ভেতরে আরেকটা গল্প, তার ভেতরে আরেকটা গল্প, এরকম রাশান মিশকা পুতুলের মতো অথবা আমাদের লোক-গল্পের প্রাণ ভ্রমরার বাক্সের মতো একেকটা পরতে কাহিনি বিন্যস্ত করেন তিনি।

আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগুলি পড়লে কার্নিভালের মতো বহুবিচিত্র একটি জগৎ, তার পলিগ্লোসিয়া―বহু-কণ্ঠ―গভীর সব দ্যোতনা, প্রতীক, অ্যাবসার্ড, পরাবাস্তব মনের ভেতরে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়। কামালের গল্পে প্রচুর প্রতীক থাকে। যেমন ‘অন্ধকার’; এটি অবশ্যই একটি পুরনো, এমনকি ক্লিশে হয়ে যাওয়া উৎপ্রেক্ষা/প্রতীক; কিন্তু পুরনোতে/ক্লিশেতে যে ক্লান্তি থাকে, নিষ্ক্রিয়তা থাকে, তা কামালের এই―এবং এর মতো অসংখ্য―পুরনো প্রতীকে/বর্ণনায়/মেটোনিমিতে নেই। এর কারণ―পুরনোকে একটা নতুন, সমসাময়িক ব্যাখ্যা দেন কামাল। অথবা পুরনো-নতুনের একটি অসম দ্বন্দ্বে তিনি কিছু অসঙ্গতি, ফাঁকি, আয়রনির আভাস দেন যা উত্তর-আধুনিক গল্পের মতো শেষ পর্যন্ত আত্মবোধক হয়ে দাঁড়ায়―আর আমাদের চিরাচরিত মূল্যবিচার, উচ্চ-নিচের প্রভেদ আর নিশ্চয়তা-চূড়ান্ততাকে মাথার ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। -সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

৳ 1,495.00 ৳ 1,196.00

In stock

Book Details

Language

Binding Type

ISBN

Publishers

Release date

Pages

Size

8.5 X 5.5

About The Author

আহমাদ মোস্তফা কামাল

আহমাদ মোস্তফা কামাল । জন্ম : ১৪ ডিসেম্বর ১৯৬৯, মানিকগঞ্জে। ইন্ডেপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ-এর অধ্যাপক। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে। পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি। প্রকাশিত হয়েছে বারোটি গল্পগ্রন্থ, আটটি উপন্যাস, চারটি প্রবন্ধগ্রন্থ, তিনটি মুক্তগদ্যের সংকলন, একটি সাক্ষাৎকারগ্রন্থ, একটি বিজ্ঞান-প্রবন্ধগ্রন্থ, একটি ভ্রমণগদ্যের সংকলন। বাংলাদেশের কথাসাহিত্য নিয়ে সম্পাদনা করেছেন দশটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। চার-খণ্ডে ‘বাঙালির সংস্কৃতিচিন্তা’ শিরোনামের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ সংকলনের সম্পাদকও তিনি। সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ লাভ করেছেন ‘প্রথম আলো বর্ষসেরা বই’ পুরস্কার, ‘এইচএসবিসি কালি ও কলম পুরস্কার’ ২০০৯, ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ ২০১৮, ‘সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার’ ২০১৮ এবং ‘পূর্বপশ্চিম সাহিত্য পুরস্কার’ ২০২১।

আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্প বলার ধরনটি―একাডেমিক বর্ণনায় তার স্টাইল, তার শৈলী―বেশ আকর্ষণীয়। গল্পের ভেতর অঞ্চলটা সচল এবং স্থিতিস্থাপক করার জন্য তিনি বর্ণনাকারীর কণ্ঠ ঘন ঘন পরিবর্তন করেন। উত্তম পুরুষে বর্ণনা, সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারীর বর্ণনা, তৃতীয় পুরুষে বর্ণনা প্রভৃতি একই গল্পে ব্যবহার করেন। সর্বজ্ঞ বর্ণনাকারী থেকে উত্তম পুরুষে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে সময়টা কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। একই ঘটনার ক্রমে, ঘড়িকে তোয়াক্কা না করে গল্পের কণ্ঠকে বদলে দেন কামাল। তাতে সময়টা এগোয় আঁকাবাঁকাভাবে, কখনো ধীরে কখনো লাফিয়ে-লাফিয়ে। গল্পের শুরুতে―শুরুর লাইনটিতেই বস্তুত, একটা চমক থাকে। বোঝা যায়, কামাল তার নিজের একটি গল্পভাষা তৈরি করেছেন, যাতে কার্যকারণের সূত্রগুলো তিনি নিজের মতো সাজিয়ে দেন। একটা গল্পের ভেতরে আরেকটা গল্প, তার ভেতরে আরেকটা গল্প, এরকম রাশান মিশকা পুতুলের মতো অথবা আমাদের লোক-গল্পের প্রাণ ভ্রমরার বাক্সের মতো একেকটা পরতে কাহিনি বিন্যস্ত করেন তিনি।

আহমাদ মোস্তফা কামালের গল্পগুলি পড়লে কার্নিভালের মতো বহুবিচিত্র একটি জগৎ, তার পলিগ্লোসিয়া―বহু-কণ্ঠ―গভীর সব দ্যোতনা, প্রতীক, অ্যাবসার্ড, পরাবাস্তব মনের ভেতরে হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দেয়। কামালের গল্পে প্রচুর প্রতীক থাকে। যেমন ‘অন্ধকার’; এটি অবশ্যই একটি পুরনো, এমনকি ক্লিশে হয়ে যাওয়া উৎপ্রেক্ষা/প্রতীক; কিন্তু পুরনোতে/ক্লিশেতে যে ক্লান্তি থাকে, নিষ্ক্রিয়তা থাকে, তা কামালের এই―এবং এর মতো অসংখ্য―পুরনো প্রতীকে/বর্ণনায়/মেটোনিমিতে নেই। এর কারণ―পুরনোকে একটা নতুন, সমসাময়িক ব্যাখ্যা দেন কামাল। অথবা পুরনো-নতুনের একটি অসম দ্বন্দ্বে তিনি কিছু অসঙ্গতি, ফাঁকি, আয়রনির আভাস দেন যা উত্তর-আধুনিক গল্পের মতো শেষ পর্যন্ত আত্মবোধক হয়ে দাঁড়ায়―আর আমাদের চিরাচরিত মূল্যবিচার, উচ্চ-নিচের প্রভেদ আর নিশ্চয়তা-চূড়ান্ততাকে মাথার ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। -সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম

Reviews

There are no reviews yet.

Be the first to review “গল্পসংগ্রহ ২”

Your email address will not be published. Required fields are marked *