মরমি সাধনা ও সংগীতের সঙ্গে লোকায়ত বাংলা ও বাঙালির গভীর সম্পর্ক ও নিগূঢ় যোগ বহুকালের। এই সাধনায় অধ্যাত্ম-উপলব্ধির পাশাপাশি মানবিক মূল্যবোধ ও সম্প্রদায়-সম্মিলনের ভাববাণীও উচ্চারিত হয়েছে। গোঁসাই গোপাল (১২৭৬-১৩১৯) ছিলেন এই ধারারই এক মহান সাধক।
বাউল-বৈষ্ণবদের পীঠস্থান শিলাইদহে গোপালের আবির্ভাব। জনক গোঁসাই রামলালও ছিলেন পরম সাধক ও মরমি পদকর্তা। পিতাই তাঁর সাধনা ও সংগীতের গুরু। বাউল-গবেষক ডক্টর উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য উল্লেখ করেছেন: ‘লালনের তিরোধানের পর কুষ্টিয়া অঞ্চলে বাউল-মতাবলম্বী একজন রসিক বৈষ্ণব সাধকের উদ্ভব হয়। ইনি শিলাইদহের গোঁসাই গোপাল।’
গোঁসাই গোপাল সাধনতত্ত্বের অনেক গান রচনা করেন। একসময় সারা বাংলা জুড়েই তাঁর গানের প্রচার-প্রসার ও আদর-কদর ছিল। গোপালের গানে যোগ-তন্ত্র ও সহজিয়া ভাবের মিশ্রণ ঘটেছিল। সুফিমতও সেই গানকে ঋদ্ধ করে। এই বিষয়ে অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন মন্তব্য করেন : ‘তিনি [গোঁসাই গোপাল] হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের জনমনের রসের জোগান দিয়াছেন।’
একদা বিশিষ্ট ও বিখ্যাত মরমি সাধক গোঁসাই গোপাল আজ প্রায়-বিস্মৃত একটি নাম। উত্তরসাধকের অভাবে তাঁর গানও বিলুপ্তির পথে। গোঁসাই গোপালের দুই পুত্রের সংকলিত গোপাল গীতাবলী নামে স্বতন্ত্র দুটি গীত-সংকলনেরও হদিস মেলে না। সেই দুষ্প্রাপ্য পুস্তিকা দুটির প্রতিলিপি সংস্করণ প্রকাশিত হলো ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায়- গোঁসাই গোপালের মরমি পদাবলি নামে।
Reviews
There are no reviews yet.