লালনসমগ্র: প্রামাণ্য লালনগীতিসমগ্র অনুবাদ ও দুষ্প্রাপ্য দলিলপত্র ফটো-অ্যালবাম সিডিসহ
এই লালনসমগ্র বইয়ে আছে চারটি পর্ব : ১. লালনের গান, ২. লালনের জীবন-গান-তত্ত্বদর্শন-শিল্পমূল্য-সামাজিক প্রতিক্রিয়াসংক্রান্ত লালন-গবেষকদের আলোচনা-মূল্যায়ন, ৩. লালন ও অনুষঙ্গী বিষয়ের দুষ্প্রাপ্য দলিলপত্র ও ফটো-অ্যালবাম, ৪. প্রবীণ ও প্রয়াত লালনগীতি শিল্পীর আখড়াই ঘরানার আদি সুরের গানের সিডি। পাঠক একই সঙ্গে লালনের গানের পাঠ ও শ্রুতিস্বাদ এবং লালনবিষয়ক মূল্যবান আলোচনার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। পূর্ণাঙ্গ লালন-জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী সংকলিত-সম্পাদিত ‘লালনসমগ্র’ তাই এই বিষয়ের কোষগ্রন্থের মর্যাদা পাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
আবুল আহসান চৌধুরী মূলত প্রাবন্ধিক ও গবেষক। সমাজমনস্ক ও ঐতিহ্যসন্ধানী। তাঁর চর্চা ও গবেষণার বিষয় ফোকলোর, উনিশ শতকের সমাজ ও সাহিত্য, সাময়িকপত্র, আধুনিক সাহিত্য, সংগীত-সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাস। তাঁর লালন সাঁই, কাঙাল হরিনাথ ও মীর মশাররফ হোসেন-বিষয়ক গবেষণা-কাজ দেশে-বিদেশে সমাদৃত হয়েছে। জন্ম কুষ্টিয়া জেলার মজমপুরে, ১৩ জানুয়ারি ১৯৫৩। সাহিত্যচর্চার পেছনে আছে পারিবারিক আবহ ও আনুকূল্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি। প্রায় সাঁইত্রিশ বছর অধ্যাপনা-পেশায় যুক্ত। বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর। পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লালনমেলা সমিতির লালন পুরস্কার (২০০০), বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ পুরস্কার (কলকাতা, ২০০৮) এবং গবেষণায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (ঢাকা, ২০০৯)।
লালন সাঁই (১৭৭৪-১৮৯০) লৌকিক বাংলার প্রধান সাংস্কৃতিক প্রতিনিধি বাউলসাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকারও তিনি। প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম ও শাস্ত্রকে অগ্রাহ্য-অস্বীকার করে তিনি যে মরমি ভুবন নির্মাণ করেছেন, তা মানবিক চেতনা ও বোধে ঋদ্ধ। এই বহুমাত্রিক লোকব্যক্তিত্ব ছিলেন সমাজমনস্ক সমকালীন সামাজিক সমস্যা তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল। তাই জাতপাত, সম্প্রদায়বিদ্বেষ ও প্রথা-সংস্কারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন গানের ভেতর দিয়ে জানিয়েছেন প্রতিবাদ। মরমি ভাবসাধনার এই স্বশিক্ষিত চারণকবির শিল্পচেতনা ও কবিত্বশক্তি বিস্ময়কর। ভাব-ভাষা-ছন্দ-অলংকারে তাঁর গান অসামান্য শিল্পসিদ্ধি অর্জন করেছিল বলেই রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষকেও তা স্পর্শ ও প্রাণিত করেছিল। লালনের কৃতিত্ব এই যে, নিম্নবর্গের একটি অবজ্ঞাত লৌকিক ধর্মসম্প্রদায়ের সাধনসংগীতকে তিনি সংগীতসাহিত্যের মর্যাদা দিয়েছেন। লালনের গান তাই আজ বাঙালির গৌরবময় সাংস্কৃতিক সম্পদ। লালনের বাণী কেবল বাংলাভাষী মানুষের ভেতরেই আজ আর সীমাবদ্ধ নেই, সে গানের সুর ছড়িয়ে পড়েছে দূর-দেশেও। বিশ্ব-নাগরিক লালন আজ শান্তি-সাম্য-সম্প্রীতি-কল্যাণ-মানবতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ১৮৮৫ থেকে লালনের গান সংগৃহীত ও প্রকাশিত হয়ে এলেও, লালনের গানের নির্ভুল ও নির্ভরযোগ্য সংকলনের অভাব পূরণ হয়নি। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে লালনসমগ্র নামে লালনের যথাসম্ভব বিশুদ্ধ ও প্রামাণ্য একটি সংকলন প্রস্তুত করেছেন লালন-বিশেষজ্ঞ ডক্টর আবুল আহসান চৌধুরী।
Reviews
There are no reviews yet.
Be the first to review “লালনসমগ্র: প্রামাণ্য লালনগীতিসমগ্র অনুবাদ ও দুষ্প্রাপ্য দলিলপত্র ফটো-অ্যালবাম সিডিসহ” Cancel reply
Reviews
There are no reviews yet.