‘বাতাসে ঝাপটার পর ঝাপটা আসছে/আষাঢ়ও চলে যাচ্ছে। শ্রাবণ এসে গেলো?’ কিম্বা ‘যাওয়াতো খুব সহজ;/নাম কেটে দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরলেই হয়! কিম্বা ‘চেনা পথ ভুলেছিলাম বহু বহু দিন। আশ্চর্য ঘূর্ণি’―বেদনা, বিরাগ আর স্বপ্ন দিয়ে মেশানো কবিতা এগুলো। অধিকাংশই ট্র্যাজিক, কারণ জীবন বাস্তবেই তেমন। এই কবি এক কবিতার মধ্যে হঠাৎ আর্তনাদ করে ওঠেন: ‘এই মধ্যরাতে বাংলার আত্মার ক্রন্দনধ্বনি/সৈয়দ শামসুল হক, আপনি শুনতে পান?’ একই কবিতা শুরু হয় ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপারে বিস্ময় রেখে যে, ‘ব্রহ্মপুত্র আমার জন্মনদী; নদ বলে ডাকে সকলে―/আমি ডাকি নদী―নদীতে বেশি ব্যাকুলতা ঝরে।’
আহা!
মাহবুব আজীজের কবিতার ডিকশন মেইনস্ট্রিমের, প্রক্ষেপণ সরল, ছন্দ মূলত মুক্ত অক্ষরবৃত্ত, থিম এই সময় ও সমাজে ব্যক্তির বাঁচার আকাঙ্ক্ষা, রং ধূসর―কিন্তু রক্তের রঙের মতো গাঢ় কখনও কখনও―টোন একাকীত্বের, চিরকালীন টোন যে সানাইয়ের, সুর লেমন-ইয়েলো মাখা প্রেমকাতরতার, আর এই কবিতাগুলির কম্পাস নিঃসন্দেহে ঘোরানো সেই দিকে, যেদিকে তাকালে স্মৃতির ঘোলার মধ্যে দিয়ে দেখা যায় কীভাবে বাজছে আমাদের সবার যার যার ক্ষণস্থায়ী জীবনের শেষ বিউগল। তাই এগুলি পড়লে মন খারাপ হয়, মন কেমন করে ওঠে।
আধুনিক কবিতা এসেছিলই আসলে আমাদের মন খারাপ করার প্রবল ও সর্বক্ষণ চালু মেশিনটাকে আরও জোর হর্সপাওয়ার দিয়ে ঘুরাতে, যেন ভাত-কাপড়ের সংগ্রামের মধ্যে দৌড়াতে থাকা ব্যক্তির প্রায়শই মনে আসে সেই অমোঘ আধ্যাত্মিক প্রশ্নটা যে, ‘জীবন এতো ছোট ক্যানে?’ বিষাদের সেই চিরকালীন ডেমনস্ট্রেশনের যে আধুনিক কবিতার ভাব-ভঙ্গি-প্রকরণ, সে উত্তরাধিকারটাই বয়ে নিয়ে চলেছেন মাহবুব আজীজ। তাঁর পুরোটা মিলে এই মাথা-নিচে-পা-উপরে তুলে দেওয়া পৃথিবীতে জীবনের গান ও যাতনার সেলিব্রেশন― আশা দিয়ে, সুর দিয়ে এবং অবশ্যই বিশ্বাসে মাখানো কিছু স্বপ্ন দিয়ে।
মাসরুর আরেফিন
কবি, কথাশিল্পী
৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
Reviews
There are no reviews yet.