সুকুমার রচনাবলী

অবনীন্দ্রনাথের কোনাে কোনাে লেখা পড়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘রংমশালে তােমার লেখাটা পড়ে ভারি মজা লাগল। এরকম বিশুদ্ধ পাগলামির কারুশিল্প আর কারাে কলম থেকে বেরােবার জো নেই। আমরা চেষ্টা করলে তার মধ্যে ঠান্ডা মাথায় হাওয়া লেগে সমস্ত জড়িয়ে দেয়। রবীন্দ্রনাথের ‘সে’ অথবা অজস্র ছড়ায় ঠান্ডা মাথায় হাওয়া লেগে তাদের জুড়িয়ে দিয়েছিল কিনা তা নিয়ে আলােচনা চলতেই পারে কিন্তু তিনি যে এক বিশেষ শ্রেণির রচনা পাগলামির কারুশিল্প বলে চিহ্নিত করেছিলেন সে বিষয়ে কিছু কথা বলা যায়। সভ্যতার ইতিহাসে দেখা যায় অত্যন্ত সুচিন্তিত যুক্তিনিষ্ঠ মনােভাবের পাশাপাশি উদ্ভটের প্রতি সমান একটা আকর্ষণ মানুষ অনুভব করে। সব দেশের অতীত সাহিত্য ঘাঁটলেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রাচীন অন্য সব লেখার কথা এ খণ্ড পরিসরে না আনলেও অন্তত ‘উদ্ভট শ্লোকমালা’ নামের বইখানির উল্লেখ এখানে করা যেতে পারে। কবিরত্ন শ্রীপূর্ণচন্দ্র দে কাব্যরত্ন উদ্ভট সাগর রচিত এ বইখানির প্রকাশ ঘটেছিল ঠিক একশাে বছর আগে। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে। এ শ্লোকসমগ্র পড়লেই অজস্র উদ্ভটের মুখােমুখি পাঠক হতে পারেন। অবশ্য এককালে নাকি ‘উদ্ভট শব্দটির অর্থ ছিল ‘উৎকৃষ্ট। তাই বলা চলে ‘উদ্ভট’ কখনােই অপকৃষ্ট নয়। অন্তত সুকুমার রায়ের রচনা তাে নয়ই। বস্তুত পাগলামির কারুশিল্প’তে অবনীন্দ্রনাথের তুলনায় সুকুমারকে কিছুতেই অবহেলা করা যায় না। বরং বলা যায় ‘উদ্ভট’ শব্দটির প্রয়ােগ আরাে নিপুণভাবে সুকুমারের কলম থেকেই হয়েছিল