আধুনিক ভারতের আর্থিক ইতিহাস

আধুনিক ভারতের আর্থিক ইতিহাস : ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক অর্থনীতি, ১৭৫৭-২০০০ খ্রি., মোট আড়াইশো বছরের পরিচয় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। এই সময়কালের বেশিরভাগ জুড়ে আছে ঔপনিবেশিক অর্থনীতির কথা। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এদেশে বাণিজ্য করতে এসেছিল, মোগল সাম্রাজ্যের পতনের যুগে তারা দেশজুড়ে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। বণিকের মানদণ্ড রাতারাতি রাজদণ্ডে পরিণতি পেল। ব্রিটিশ শাসন এদেশে কী ধরনের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল তা হল এই গ্রন্থের প্রতিপাদ্য বিষয়। ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী গোড়ার দিকে এদেশের শিল্প- বাণিজ্যের ক্ষতি করে ব্রিটিশ অর্থনৈতিক স্বার্থরক্ষা করে চলেছিল। কৃষি ও হস্তশিল্প নির্ভর এদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্রিটিশ সরকার এদেশে তিন ধরনের ভূমি ব্যবস্থা স্থাপন করে সর্বাধিক রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেছিল। নতুন বিচার ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এদেশের কোটি কোটি কৃষক। ব্রিটিশ মেশিনজাত শিল্পপণ্য এদেশে অবাধে আমদানির ব্যবস্থা হয়, এতে দুর্দশায় পড়েছিল হস্তশিল্পী ও কারিগররা। এদের মধ্যে বহু লোক কর্মচ্যুত হয়ে কৃষিতে গিয়ে ভিড় করেছিল, অথবা জীবিকার সন্ধানে বিদেশে পাড়ি দিয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনকালে শোষণ চলেছিল, এদেশের সম্পদ হোমচার্জের আড়ালে বিদেশে গিয়ে পুঁজিতে রূপান্তরিত, আবার সেই পুঁজি এদেশে হালকা রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপনের কাজে ব্যবহার করা হয়। এদেশে ব্রিটিশ পুঁজি ভারী মৌলিক শিল্প যেমন, লোহা, ইস্পাত, যন্ত্রপাতি গড়ে তোলেনি। ব্রিটিশ শাসনাধীনে এদেশের দারিদ্র্য বেড়েছিল, ঘন ঘন দুর্ভিক্ষ হত, মারা যেত লক্ষ লক্ষ দরিদ্র ভারতবাসী। ব্রিটিশ শাসনের শেষ অবধি ব্রিটিশ অর্থনীতির বড়ো ধরনের পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীনতার পর ভারত মিশ্র অর্থনীতির পথ ধরেছে, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা হয়েছে, সাময়িক অসুবিধা অতিক্রম করে স্বাধীন ভারতের অর্থনীতি অনেকটা স্থিতিশীল হয়েছে। বিশ্বায়নের প্রভাব পড়েছে ভারতীয় অর্থনীতির ওপর, নব্বই ও একবিংশ শতকের গোড়ায় সংস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে এ গ্রন্থ।