একুশ থেকে স্বাধীনতা

এক সময় ছিল যখন একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালীর রাষ্ট্রীয় জীবনেই স্বীকৃত ছিল না। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতাে একুশে ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়েছিল। সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের অংশ বিশেষের ভাগাভাগিতে আবু হােসেন সরকারের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ববাংলায় গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এর পর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল। ১৯৭২ সাল থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় মর্যাদায় অভিষিক্ত হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে নিয়ে বাঙালী জাতির প্রাণের আবেগ। এবং উচ্ছাসই তাকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় নিয়ে যায়। ১৯৯২ সাল থেকে ভারতের বাংলাভাষী রাজ্য ত্রিপুরা ঘােষণা করে তাদের রাজ্যে তারা একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘বাংলাভাষা দিবস' হিসেবে পালন করবে। পরে পশ্চিমবাংলায়ও বেসরকারিভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ইতােমধ্যে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে। এটি আমাদের জন্য বিশেষ গৌরবের ব্যাপার। এই আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস আমাদের মাতৃভাষার জন্য সংগ্রামেরই স্বীকৃতি। তবে শুধু তাই নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের সমস্ত জাতি এবং দেশের জাতীয় ভাষা চর্চার স্বাধীনতা ও অধিকারেরও স্বীকৃতি। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল একটি প্রবল। প্রতিবাদ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখরতা। আমরা একুশে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২-তে আপন অস্তিত্বকে আবিষ্কার করতে সাহসী হয়েছিলাম। পাকিস্তান আমলে সমগ্র পাকিস্তান একটি মাত্র রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে এদেশের মানুষ প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল। বায়ান্নোর একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতীয় জীবনে একটা সফল স্মৃতি, একটি আদর্শ, একটি দর্শন ও দিক নির্দেশনা, স্বাধীনতার মূর্ত প্রতীক ও ইতিহাস। একটি জাতির ভাষাকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠে সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, সাহিত্য ও ইতিহাস, বাঙালি জাতিসত্ত্বা নির্মাণের এক অনন্য অধ্যায় ভাষা আন্দোলন। ভাষা আন্দোলনের ত্যাগ তিতিক্ষাই পরবর্তীকালের সফল সংগ্রামের অনুপ্রেরণার উৎস।