স্মৃতির মণিকোঠায়’ ৭১

স্মৃতির মণিকোঠায় '৭১ একটি গ্রন্থ। এটি একটি স্মৃতিচারণ। দীর্ঘ স্মৃতিচারণ। বইটির নামেই স্বয়ংপরিচিতি। বুঝতে কষ্ট হয় না যে- এ স্মৃতিচারণ একাত্তরের। একাত্তর বাঙালির নবজন্মের জন্মসন। পুনর্জাগরণের কালপর্ব। একাত্তর আমাদের জন্মদেশ- বিশ্বের বিস্ময়বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সােনালি সময়। আমাদের বীরত্বের হরিষেবিষাদ গাথা একাত্তর । বিজয়ের গর্বের অহংকারের এবং মা-ভাই বােন স্বজন হারানাের অপূরণীয় বেদনার বর্ষ একাত্তর। প্রাণের পতাকা, হৃদপিণ্ডের মতাে স্বদেশের মানচিত্র পাওয়ার বছর একাত্তর। সেই মুক্তিযুদ্ধের ও স্বাধীনতার এক বীর মুক্তিযােদ্ধা কে, এম. ফরহাদ হােসেন। তাই আদতে এক মুক্তিযােদ্ধার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতির লিখিতরূপ-স্মৃতির মনিকোঠায় '৭১।। ফরহাদ কোন বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিক নন। তার স্মৃতিচারণ কোন কবির কল্পনা বা গল্পকার ও ঔপন্যাসিকের ভাষার বুনন নয়। সত্য ঘটনার সাদামাটা বর্ণনা। এখানেই ফরহাদের সাফল্য; এখানেই। বইটির স্বাতন্ত্র। একাত্তরের জীবনমরণ অনিশ্চয়তার দিনগুলাের ভয়াবহ স্মৃতির অকপট বিবরণই-স্মৃতির মনিকোঠায় '৭১। কেমন করে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষায় বাঙালি উদ্বেলিত হলাে, কেমন করে বাঙালি স্বাধিকার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠল; কেমন করে দেশপ্রেমিক তরুণ সমাজ এবং সাধারণ নরনারী মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে গেল; স্বাধীনতার জন্য কত কষ্ট, কত আগুন জ্বালাও পােড়াও, কত মৃত্যু। এসবের সামান্য কিন্তু স্বগৌরবে সমৃদ্ধ বাঙালির কীর্তির কিছু কথা ফরহাদ তার বইতে সহজ ও সাবলীল ভাষাভঙিমায় তুলে ধরেছেন। এ বইতে আছে রাজাকারের উৎপাতের কথা। আছে শরনার্থীদের দুঃসহ যন্ত্রণার কাথা, মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণের কথা; স্বল্প সময়ে দ্রুততার সাথে মুক্তিযােদ্ধাদের দক্ষতা অর্জনের কথা, বীরত্বপূর্ণ সফল অপারেশন বা যুদ্ধের কথা। আদতে মুক্তিযােদ্ধা বা একাত্তরের প্রত্যক্ষদর্শিমাত্রই বইটি পাঠ করে ফিরে যাবেন মুক্তিযুদ্ধের উত্তাল সময়ে। এ প্রজন্মের কিশাের কিশােরীরাও পাবে অন্যরকম এক এ্যাডভেঞ্চার-যা মাতভূমির স্বাধীনতার অভিযান; সবুজে সূর্য আকা পতাকার জন্মকথা। বিলম্বে হলেও ফরহাদ এ প্রজন্মের জন্যে একজন মুক্তিযােদ্ধা হিসেবে এ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে এক পবিত্র ও মহান দায়িত্ব পালন করেছেন। জয়তু ফরহাদ। জয়তু মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা; জয়তু প্রিয় জন্মদেশ- বাংলাদেশ।