অখণ্ড লালনসঙ্গীত

অখণ্ড লালনসঙ্গীতকে খণ্ডিতভাবে দেখাজানাশােনার কারণে এ মহাভাব সমুদ্রের অতল মর্মে প্রবেশের পথ খুঁজে পায়নি অভাগা বাঙালি অর্থাৎ খণ্ডিত বাঙালি জাতি। সমাজ সংসার আজও তাই মানবধর্মের প্রদর্শিত সত্য সুপথহারা। অভণ্ডভাবে লালনসঙ্গীত শ্রবণ, মনন ও অনুধাবন সাধকচিত্তে উচ্চাঙ্গিক। সহাভাবের উদয় ঘটায় । এ পথেই আমরা ভব থেকে অনুভবে কিংবা অভাব থেকে ভাবে উত্তীর্ণ হই সাধুসঙ্গ ও সঙ্গীতের স্বর্গীয় পরশে। এমন অপার্থিব শুদ্ধপ্রেমের আবির্ভাবেই আল্লাহদর্শন বা ঈশ্বরদর্শন ঘটে সাধকের দেহমনসত্তায়। নূরে মােহাম্মদী স্নাত আত্মদর্শন যার পরম নাম। এ জন্যে ত্রিত্ববাদী অখণ্ড লালনসঙ্গীতের প্রথম তত্ত্ব ‘নূরতত্ত্ব’ যা সর্বসৃষ্টির মূল বা স্বরূপশক্তি । নবীতত্ত্ব’ ও ‘রসুলতত্ত্ব যার সর্বকালীন-সর্বজনীন গুরু আদর্শের অপরাজেয় ধারক এবং বাহক। মহাজাগতিক রহস্যলােকের অধরা বাণী আর জায়মান সুরতাললয়ের মাধুরী মন্থনে লালন শাহী ফকিরী কোরানের উত্তাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিশ্বহৃদয় সৈকতে। তার অব্যর্থ ও অভিনব ঘাত অভিঘাতে আলােড়িত হয় মানব দানব দেবলােক। লালনসঙ্গীত মূলত গুরুশিষ্যকেন্দ্রিক অতিবাস্তব ও অন্তর্গত সূক্ষ্ম সম্বন্ধ চর্চার সামাজিক দলিল। কেবল সৎ ও শুদ্ধভক্তই লালনসঙ্গীতের অধিকারী। ভক্ত ব্যতীত আত্মদর্পী কোনও রাজা-বাদশারও প্রবেশাধিকার নেই নিগূঢ় এ রসরাজ্যে। শাইজী বলেন, ভক্তের বড় পণ্ডিত নয়। অথচ দুই বাঙলায় খ্যাতিযশলােভী অসৎ পণ্ডিত-ডক্টরদের সঙ্কলন ও সম্পাদনায় খণ্ডিত লালনসঙ্গীত’ বা ‘লালনসমগ্র প্রকাশের নামে যে অবিচার-অনাচার এক কথায় অনধিকার চর্চার হিড়িক পড়েছে তাদের ভ্রান্তচিন্তা এ গ্রন্থপাঠে সুস্পষ্টভাবে পাঠক-সাধকের কাছে খােলাসা হবে।