ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ

দেশ ভাগ হয়। তার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাগও হয়ে যায়। দেশভাগ কি সব সমস্যার সমাধান করতে পেরেছে? তাহলে ভাষাকে সামনে রেখে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আর উপনিবেশিক শোষণ-শাসন থেকে রেহাই পেতে পাকিস্তান ভেঙে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হল কেন? এটাও ছিল আরেক বাস্তবতা। কিন্তু একটা কথা তো স্বীকার করতে হবে দেশভাগ আর বাংলা ভাগ যখন হয় তখন সেই পারাপারটা কিন্তু একপক্ষীয় ছিল না, ছিল দ্বিপক্ষীয় । পূর্ববঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্তান থেকে যেমন বাঙালি হিন্দুরা এসেছেন শরার্থী হয়ে, তেমনি পশ্চিমবঙ্গ থেকেও বিরাট সংখ্যক বাঙালি মুসলিম এসেছেন পূর্ব পাকিস্তান বা স্বাধীন বাংলাদেশে। বিপন্নতা, আতঙ্ক বা রাষ্ট্রযন্ত্রের উদ্দেশ্য প্রোণোদিত দাঙ্গা দুপারের মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে। সৈয়দা রিতা বেগম চৌধুরী ও শান্তা চৌধুরী দুজনেই তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দুজনেই একদা বঙ্গ-বিহার-ওড়িশার রাজধানী মুর্শিদবাদে গবেষণার কাজে এসেছেন। রিতার আদি পৈতৃক নিবাস মুর্শিদাবাদে। শান্তার বাড়ি চট্টগ্রাম। দুজনের বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে হলেও তারা এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। রিতাদের পরিবার ভিটেমাটি ছাড়া হয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে দেশভাগের পরেই। শান্তারা দেশ না ছাড়লেও তাদের পরিবার-পরিজন-বংশধররা অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে মুর্শিদাবাদ বা পশ্চিমবঙ্গের আনাচে-কানাচে রয়েছেন। কলকাতা ছুয়ে মুর্শিদবাদ এলে তাদের সঙ্গে পরিচয় হয় হাবিবুর নামে এক গাইডের। আদৌ কি সে গাইড? একদা ঢাকাও অবিভক্ত বঙ্গের রাজধানী ছিল। এইসব ইতিহাস যখন হাবিব বলে তখন রিতা ও শান্তার মনে সন্দেহ হয় হাবিবকে নিয়ে। তাদের দুজনের মনে স্থান পায় হাবিবুর রহমান বা হাবিব। ইতিহাস, পারাপার, অব্যক্ত প্রেম-আখ্যান, ইতিহাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি নিয়ে ‘ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ'-এর কাহিনী আবর্তিত। বাকিটা পাঠকের।