মহম্মদচরিত

মহম্মদচরিত গ্রন্থের লেখকের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি বা পরিচয় আক্ষরিক অর্থেই কৌতুহলােদ্দীপক। শুরুতে একজন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী লেখক নবি চরিত্রকে কীভাবে চিত্রিত করছেন, কতােটা মােহ বা নির্মোহ, কতােটা আবেগ বা নিরাবেগ, কতােটা দূরত্ব বা নৈকট্যের টানাপােড়েনে ছিলেন সেটাই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে শেষপর্যন্ত লেখকের অপূর্ব ভাষাশৈলী, অনুপম উপস্থাপনা, বর্ণনার গতিশীলতা পাঠকের অন্তরকে আপাদমস্তক মুগ্ধতার চাদরে ঢেকে দেবে। ভক্তির। আতিশয্য নয়, স্বচ্ছ নৈর্বক্তিক দৃষ্টিতে কলম ধরেছিলেন কৃষ্ণকুমার মিত্র। মুদ্রিত হরফে সেই শ্রদ্ধাঘন উপলব্ধিই হলাে মহম্মদচরিত। মহম্মদচরিত শুধু উপচানাে তথ্য-উপাত্তের কাঠিন্য নয়, মহম্মদচরিত প্রকৃতই সাহিত্যিক মাধুর্যে অলংকৃত। মহম্মদচরিত’র প্রাঞ্জল, মনােহরী ভাষার দ্যুতি বেশ চমক জাগানিয়া। মহম্মদ সা. এর জীবন ও কর্মের বিশাল ব্যাপকতার বিপরীতে দাড়িয়ে। কৃষ্ণকুমার খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে, মার্জিত ভঙ্গিতে, শিল্পীত মুন্সিয়ানায় মহম্মদ সা. কে চিত্রিত করেছেন। একান্ত ধ্যান ধারণা ও বিশ্বাসের মানদণ্ডে কোথাও কিছু আরােপিত হয়নি, নেই বাড়াবাড়ির চিহ্ন। নিখাদ সরলরেখায় এ যেন শব্দের অনুপম এক বুনন সাহিত্যবিচারে নিঃসন্দেহে ইহা উত্তীর্ণ, তাই কালােত্তীর্ণও হয়েছে অনায়াসে। নবি চরিত্রের প্রতিটি দিক, পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যায়-তার কঠিন সংগ্রাম, উপরন্তু মুসলিম ধর্ম প্রতিষ্ঠার সুনিপুণ কাহিনি অপূর্ব হৃদ্যতার মিশেলে হয়ে উঠেছে। আক্ষরিক অর্থেই অনবদ্য। তাই মননশীল পাঠকের কাছে গ্রন্থখানা সবিশেষ পাঠযােগ্য, গ্রহণীয়, কলােত্তীর্ণ হয়েছে অনায়াসে