বাতুল থেকে বাউল

বাঙালি জীবন প্রাচীনকাল থেকেই বাউলময়। বাঙালির মননধর্মের স্বরূপ এই যে, ভেতরে ভেতরে সে বাউল, সে বৈরাগ্যপ্রিয়। পরম বস্তুবাদী হয়েও সে ভাববাদী চেতনাকে পরিহার করতে পারে না। এক কথায় বলতে হয়, প্রায় প্রতিটি বাঙালির ভেতরে একটা বাউল মন আছে, একটা ভাবের। জগৎ আছে। এমন কি পুরােদস্তুর সাংসারিক বাঙালিও বাউল জীবনের প্রতি কিছুটা হলেও টান অনুভব করে, বাউলের প্রতি এক গভীর মমত্ববােধ। অনুভব করে। আসলে বাঙালি মন স্বভাবগতভাবেই উচাটন, উদাসী, ভাবােন্মত্তবাংলার মাটিতেই বাউল মতের উদ্ভব, বাঙালির গভীর জীবন দর্শন থেকে উৎসারিত, একান্তভাবেই বাঙালির নিজস্ব সম্পদ। বিভিন্ন লৌকিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের সাধনপদ্ধতিকে আত্মীকরণ করে গড়ে উঠেছে এই বাউল সাধনার ধারা, এই ধারায় অবলীলায় মিশে গেছে। বেদ-উপনিষদের দার্শনিক ধারা, বৌদ্ধ সহজিয়া সাধনার পদ্ধতি, তান্ত্রিক সাধনার পদ্ধতি, বৈষ্ণবের জীবাত্মা- পরমাত্মা তত্ত্ব, গীতার ভক্তিমার্গ এবং সুফি সাধনার পদ্ধতি। দীর্ঘ সময়ের ধারাবাহিকতায় বাংলায় কীভাবে বাউল, বাউল সম্প্রদায় ও বাউলতত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে গ্রন্থটি তার একটি গবেষণাধর্মী প্রয়াস।