Skip to Content
দিনলিপি ( সরদার ফজলুল করিম )

Price:

850.00 ৳


Atomic Habits by James Clear
Atomic Habits by James Clear
1,798.00 ৳
1,798.00 ৳
Hercule Poirot : The Complete Short Stories
Hercule Poirot : The Complete Short Stories
2,100.00 ৳
2,100.00 ৳

দিনলিপি ( সরদার ফজলুল করিম )

https://pathakshamabesh.com/web/image/product.template/2216/image_1920?unique=7910a04

850.00 ৳ 850.0 BDT 850.00 ৳

Not Available For Sale


This combination does not exist.

Terms and Conditions
30-day money-back guarantee
Shipping: 2-3 Business Days

 Delivery Charge (Based on Location & Book Weight)

 Inside Dhaka City: Starts from Tk. 70 (Based on book weight)

 Outside Dhaka (Anywhere in Bangladesh): Starts from Tk. 150 (Weight-wise calculation applies)

 International Delivery: Charges vary by country and book weight — will be informed after order confirmation.

 3 Days Happy ReturnChange of mind is not applicable

 Multiple Payment Methods

Credit/Debit Card, bKash, Rocket, Nagad, and Cash on Delivery also available. 

বড় বড় মানুষদেরও ছোট ছোট দুঃখ-কষ্ট থাকে, ব্যক্তিগত নানা অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি থাকে, যা তঁাদের কষ্ট দেয়। অথচ, বড় বড় এসব মানুষ তাঁদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে, নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তির সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের জীবন নিষ্কণ্টক করার জন্য কতই না পথ রেখে যান। তাঁদের দেখানো পথে আমরা হাঁটতে পারি না, যেহেতু আমাদের সেই পা নেই, সেই শক্তি নেই। ফলে জীবনের সঙ্গে নানা বিবাদে জড়িয়ে পড়ি আমরা, ভুলে থাকি বড় মানুষদের। আমাদের জীবন অকিঞ্চিৎকর হয়ে দাঁড়ায়। অথচ কতখানি পূর্ণতা আমরা অর্জন করতে পারতাম, কতখানি পূর্ণতা ওই সব বড় মানুষেরা অর্জন করেছেন—সেটি ভেবে আমাদের গ্লানি হয়, বড়দের আরও বড় মনে হয়, নিজেদের আরও ছোট। কখন? যখন তাঁদের বয়ানে তাঁদের অসামান্য জীবনকে আমরা জানতে পারি। তাঁদের লেখা পড়ে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও মন্তব্য টিকা টিপ্পনী পড়ে। অথবা তাঁদের আত্মজীবনীমূলক রচনা পাঠের পর। এসব লেখার একটা মূল্য আছে এই কারণে যে, এসব লেখায় আমরা নিজেদেরও দেখতে পাই, এবং দেখে কুণ্ঠিত, লজ্জিত হই। আমরা কেন লিলিপুট, তারা কেন গালিভার, সে চিন্তাটি প্রবল হয়। আমরা বুঝতে পারি, বড় হওয়াটা সহজ কাজ নয়। বড়দের মধ্যেও বড় থাকেন কেউ কেউ, যেমন সরদার ফজলুল করিম। আজ তাঁর নব্বইতম জন্মদিন। দর্শনবিদ, পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এই মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন নির্মোহ, বিনয়ী ও জ্ঞানপিপাসু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাদের শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তাঁর বিচরণ ছিল সমাজতত্ত্ব থেকে সাহিত্য, রাজনীতি থেকে লোকজ সংস্কৃতির নানা অঞ্চলে। আমরা তাঁকে জানতাম এক অত্যাশ্চর্য মানুষ হিসেবে, যিনি একাধারে নীতি ও নন্দনতত্ত্বের পূজারি, সারা বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে নিজের মেধা দিয়ে জানার সাধনায় লিপ্ত এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ এবং অর্জিত জ্ঞান অনুসারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সংকল্পে স্থিত একজন শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কিন্তু মানুষটিকে আমি শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণের জন্য। এ রকম মানুষ সব যুগে অনেক আসেন, তা বলা যাবে না, ইউরোপের কোনো দেশ হলে তিনি পরিচিতি পেতেন সারা বিশ্বে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো খেদ নেই আমার, যেহেতু বাংলাদেশে তাঁর যে অবস্থান, তা ওই বৈশ্বিক স্বীকৃতি থেকে কোনো অংশে কম উজ্জ্বল নয়। সরদার ফজলুল করিমের লেখালেখির সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় আমার। এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য মানুষেরও। আমি দেখেছি, তাঁর লেখার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় রয়েছে—জ্ঞানকে তিনি মূলভূমি হিসেবে দেখেছেন। এ জন্য তাঁর লেখায় জ্ঞানের স্বপক্ষে একটা প্রচার চলে সব সময়; তিনি আধুনিক মানুষের সমস্যাগুলো উপমহাদেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছেন, ফলে ইউরোকেন্দ্রিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন, একে পুনর্নির্মাণ করতে পারেন; তিনি সমষ্টি থেকে ব্যক্তিমানুষে বেশি উৎসাহী, এবং লঘু-গুরুর প্রথাগত বিচারে যান না। তাঁর মতে, সর্বহারা ও সর্বজয়ী একই কাতারভুক্ত—সমস্যা শুধু ভঙ্গিতে, চর্চাতে। এবং চতুর্থত, তাঁর লেখা ভীষণ রকম সমসাময়িক, আমি নিশ্চিত এক শ বছর পর তাঁকে পাঠক যেমন পড়বে, তেমন তাঁকে পাঠ করছে আমাদের সময়। সরদার ফজলুল করিম দিনলিপি লিখতেন, জানা ছিল, কিন্তু কতটা ক্রমিক ছিল সেই কাজ অর্থাৎ প্রতিদিন লিখতেন কি না এবং কারা ছিলেন তাঁর দিনলিপির পৃষ্ঠাজুড়ে অথবা নেপথ্যে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। এই দিনলিপিটিতে কী নেই। ব্যক্তিগত জীবন থেকে নিয়ে রাজনীতি; শিক্ষাচিন্তা থেকে নিয়ে সাংস্কৃতিক পাঠ—দিনলিপিতে এর সবই আছে। আরও আছে নানা ব্যক্তি নিয়ে সরদারের মন্তব্য অথবা পর্যবেক্ষণ। দিনলিপিটি বেশ বিস্তৃত। এর শুরু ১৯৭৬ সালে, শেষ ২০১১ সালে। এই দীর্ঘ সময়ের দর্পণ এই দিনলিপিটি প্রায় পাঁচ দশকের পটপরিবর্তনের এক চমৎকার খতিয়ান। তাঁর দেখার চোখ ছিল সুবিস্তৃত; সে চোখে কী কী ধরা পড়েছে তার একটা খতিয়ান দেওয়া যায়: রুশো, তাজউদ্দীন আহমদ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ, প্লেটো, খাপড়া ওয়ার্ড, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অথবা শেখ মুজিব—বিস্তৃত ক্যানভাসটা এ গ্রন্থের বড় আকর্ষণ। সরদারের দিনলিপিটি কয়েকভাবে ভাগ করে নিতে হয়—যেমন: একাত্তর, বাঙালিয়ানা, ব্যক্তিমানুষ, জীবন ও বাস্তবতা। এর বাইরেও কিছু সূত্র আছে যার কয়েকটি একিট সামাজিক বিভাজন তৈরির জন্য যথেষ্ট। তারপর? যাঁরা সরদারের সঙ্গে থাকেন, থেকে যান, তাঁরা পুরস্কৃত হন। দিনলিপিটি সম্পাদনা করেছেন মার্জিয়া লিপি, নিজেও যিনি লেখক ও সরদারের গুণগ্রাহী। লিপির সম্পাদনা ভালো, শুধু বানানের সমস্যাটা ছাড়া। যাঁদের নিয়ে সরদার লিখেছেন, তাঁরা সবাই যে বিখ্যাত ছিলেন, তা নয়। তবে তিনি তাঁদের ঘটনাবহুল জীবন; তাঁদের আন্তসম্পর্ক, চিন্তাভাবনার রূপ-কাঠামো—এসব নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন। তাঁর দেখার দৃষ্টি ছিল প্রখর, প্রকাশভঙ্গিও ছিল তীব্র। তাঁর লেখায় কৌতুক ছিল, ছিল শ্লেষও। দিনলিপির প্রতিটি পাতায় এক অবাক সরদারকে আবিষ্কার করি, যিনি একাধারে ব্যক্তি, সমষ্টির প্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক কর্মী। সরদার স্যার যেখানেই থাকুন, তাঁর উচ্চতায় সমাসীন থাকুন, তাঁর দিনলিপি আমাদের দেখার অনেক দৃষ্টি খুলে দেবে, আমি নিশ্চিত।

সরদর ফজলুল করিম

সরদর ফজলুল করিম মে ১, ১৯২৫- সালের পহেলা মে বরিশালের আটিপাড়া গ্রামের এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন৷ বাবা খবিরউদ্দিন সরদার কৃষিকাজ করতেন৷ মা সফুরা বেগম ছিলেন গৃহিণী৷ তাঁরা দুই ভাই তিন বোন৷ সরদার ফজলুল করিমের শৈশবকাল কেটেছে গ্রামে৷ ম্যাট্রিকুলেশন শেষে তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪০ সালে। ঢাকায় ১৯৪২ সনে তিনি তার আই.এ. পাঠ সমাপ্ত করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৪৫ সনে দর্শনশাস্ত্রে অনার্স ও ১৯৪৬ সনে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্রে শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। পরবর্তীতে তার সাম্যবাদী বামপন্থী সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত থাকার পর্যায়ে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিগৃহীত হন। রাজবন্দি হিসেবে দীর্ঘ ১১ বৎসর বিভিন্ন পর্যায়ে কারাজীবন যাপন করেন। জেলে থাকা অবস্থাতেই ১৯৫৪ সনে তিনি পাকিস্তান সংবিধান সভার সদস্য হিসেবে কাজ করেন। পরে ১৯৬৩ থেকে '৭১ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পাকিস্তান হানাদারবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন। পরবর্তিতে তিনি আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষক হিসেবে শিক্ষাদান শুরু করেন। তিনি ১৫ জুন, ২০১৪ তারিখে ঢাকার শমরিতা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়মারা যান৷

Title

দিনলিপি ( সরদার ফজলুল করিম )

Author

সরদর ফজলুল করিম

Publisher

Mowla Brothers

Number of Pages

591

Language

Bengali / বাংলা

Category

  • Diary
  • Memories
  • First Published

    FEB 2022

    বড় বড় মানুষদেরও ছোট ছোট দুঃখ-কষ্ট থাকে, ব্যক্তিগত নানা অপূর্ণতা, অপ্রাপ্তি থাকে, যা তঁাদের কষ্ট দেয়। অথচ, বড় বড় এসব মানুষ তাঁদের মেধা ও প্রতিভা দিয়ে, নিজেদের বুদ্ধিবৃত্তির সর্বোত্তম প্রকাশ ঘটিয়ে আমাদের জীবন নিষ্কণ্টক করার জন্য কতই না পথ রেখে যান। তাঁদের দেখানো পথে আমরা হাঁটতে পারি না, যেহেতু আমাদের সেই পা নেই, সেই শক্তি নেই। ফলে জীবনের সঙ্গে নানা বিবাদে জড়িয়ে পড়ি আমরা, ভুলে থাকি বড় মানুষদের। আমাদের জীবন অকিঞ্চিৎকর হয়ে দাঁড়ায়। অথচ কতখানি পূর্ণতা আমরা অর্জন করতে পারতাম, কতখানি পূর্ণতা ওই সব বড় মানুষেরা অর্জন করেছেন—সেটি ভেবে আমাদের গ্লানি হয়, বড়দের আরও বড় মনে হয়, নিজেদের আরও ছোট। কখন? যখন তাঁদের বয়ানে তাঁদের অসামান্য জীবনকে আমরা জানতে পারি। তাঁদের লেখা পড়ে, ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ও মন্তব্য টিকা টিপ্পনী পড়ে। অথবা তাঁদের আত্মজীবনীমূলক রচনা পাঠের পর। এসব লেখার একটা মূল্য আছে এই কারণে যে, এসব লেখায় আমরা নিজেদেরও দেখতে পাই, এবং দেখে কুণ্ঠিত, লজ্জিত হই। আমরা কেন লিলিপুট, তারা কেন গালিভার, সে চিন্তাটি প্রবল হয়। আমরা বুঝতে পারি, বড় হওয়াটা সহজ কাজ নয়। বড়দের মধ্যেও বড় থাকেন কেউ কেউ, যেমন সরদার ফজলুল করিম। আজ তাঁর নব্বইতম জন্মদিন। দর্শনবিদ, পণ্ডিত, চিন্তাবিদ এই মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন নির্মোহ, বিনয়ী ও জ্ঞানপিপাসু। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাদের শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু তাঁর বিচরণ ছিল সমাজতত্ত্ব থেকে সাহিত্য, রাজনীতি থেকে লোকজ সংস্কৃতির নানা অঞ্চলে। আমরা তাঁকে জানতাম এক অত্যাশ্চর্য মানুষ হিসেবে, যিনি একাধারে নীতি ও নন্দনতত্ত্বের পূজারি, সারা বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারকে নিজের মেধা দিয়ে জানার সাধনায় লিপ্ত এক নিবেদিতপ্রাণ মানুষ এবং অর্জিত জ্ঞান অনুসারীদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার সংকল্পে স্থিত একজন শিক্ষক। তাঁর সঙ্গে পরিচয় ছিল, ঘনিষ্ঠতা ছিল না, কিন্তু মানুষটিকে আমি শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি তাঁর ব্যক্তিত্বের গুণের জন্য। এ রকম মানুষ সব যুগে অনেক আসেন, তা বলা যাবে না, ইউরোপের কোনো দেশ হলে তিনি পরিচিতি পেতেন সারা বিশ্বে। কিন্তু এ নিয়ে কোনো খেদ নেই আমার, যেহেতু বাংলাদেশে তাঁর যে অবস্থান, তা ওই বৈশ্বিক স্বীকৃতি থেকে কোনো অংশে কম উজ্জ্বল নয়। সরদার ফজলুল করিমের লেখালেখির সঙ্গে দীর্ঘকালের পরিচয় আমার। এবং বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের অসংখ্য মানুষেরও। আমি দেখেছি, তাঁর লেখার চারটি গুরুত্বপূর্ণ পরিচয় রয়েছে—জ্ঞানকে তিনি মূলভূমি হিসেবে দেখেছেন। এ জন্য তাঁর লেখায় জ্ঞানের স্বপক্ষে একটা প্রচার চলে সব সময়; তিনি আধুনিক মানুষের সমস্যাগুলো উপমহাদেশীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেছেন, ফলে ইউরোকেন্দ্রিকতাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন, একে পুনর্নির্মাণ করতে পারেন; তিনি সমষ্টি থেকে ব্যক্তিমানুষে বেশি উৎসাহী, এবং লঘু-গুরুর প্রথাগত বিচারে যান না। তাঁর মতে, সর্বহারা ও সর্বজয়ী একই কাতারভুক্ত—সমস্যা শুধু ভঙ্গিতে, চর্চাতে। এবং চতুর্থত, তাঁর লেখা ভীষণ রকম সমসাময়িক, আমি নিশ্চিত এক শ বছর পর তাঁকে পাঠক যেমন পড়বে, তেমন তাঁকে পাঠ করছে আমাদের সময়। সরদার ফজলুল করিম দিনলিপি লিখতেন, জানা ছিল, কিন্তু কতটা ক্রমিক ছিল সেই কাজ অর্থাৎ প্রতিদিন লিখতেন কি না এবং কারা ছিলেন তাঁর দিনলিপির পৃষ্ঠাজুড়ে অথবা নেপথ্যে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা ছিল না। এই দিনলিপিটিতে কী নেই। ব্যক্তিগত জীবন থেকে নিয়ে রাজনীতি; শিক্ষাচিন্তা থেকে নিয়ে সাংস্কৃতিক পাঠ—দিনলিপিতে এর সবই আছে। আরও আছে নানা ব্যক্তি নিয়ে সরদারের মন্তব্য অথবা পর্যবেক্ষণ। দিনলিপিটি বেশ বিস্তৃত। এর শুরু ১৯৭৬ সালে, শেষ ২০১১ সালে। এই দীর্ঘ সময়ের দর্পণ এই দিনলিপিটি প্রায় পাঁচ দশকের পটপরিবর্তনের এক চমৎকার খতিয়ান। তাঁর দেখার চোখ ছিল সুবিস্তৃত; সে চোখে কী কী ধরা পড়েছে তার একটা খতিয়ান দেওয়া যায়: রুশো, তাজউদ্দীন আহমদ, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতাযুদ্ধ, প্লেটো, খাপড়া ওয়ার্ড, কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অথবা শেখ মুজিব—বিস্তৃত ক্যানভাসটা এ গ্রন্থের বড় আকর্ষণ। সরদারের দিনলিপিটি কয়েকভাবে ভাগ করে নিতে হয়—যেমন: একাত্তর, বাঙালিয়ানা, ব্যক্তিমানুষ, জীবন ও বাস্তবতা। এর বাইরেও কিছু সূত্র আছে যার কয়েকটি একিট সামাজিক বিভাজন তৈরির জন্য যথেষ্ট। তারপর? যাঁরা সরদারের সঙ্গে থাকেন, থেকে যান, তাঁরা পুরস্কৃত হন। দিনলিপিটি সম্পাদনা করেছেন মার্জিয়া লিপি, নিজেও যিনি লেখক ও সরদারের গুণগ্রাহী। লিপির সম্পাদনা ভালো, শুধু বানানের সমস্যাটা ছাড়া। যাঁদের নিয়ে সরদার লিখেছেন, তাঁরা সবাই যে বিখ্যাত ছিলেন, তা নয়। তবে তিনি তাঁদের ঘটনাবহুল জীবন; তাঁদের আন্তসম্পর্ক, চিন্তাভাবনার রূপ-কাঠামো—এসব নিয়ে অনেক মন্তব্য করেছেন। তাঁর দেখার দৃষ্টি ছিল প্রখর, প্রকাশভঙ্গিও ছিল তীব্র। তাঁর লেখায় কৌতুক ছিল, ছিল শ্লেষও। দিনলিপির প্রতিটি পাতায় এক অবাক সরদারকে আবিষ্কার করি, যিনি একাধারে ব্যক্তি, সমষ্টির প্রতিনিধি, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী, দার্শনিক ও রাজনৈতিক কর্মী। সরদার স্যার যেখানেই থাকুন, তাঁর উচ্চতায় সমাসীন থাকুন, তাঁর দিনলিপি আমাদের দেখার অনেক দৃষ্টি খুলে দেবে, আমি নিশ্চিত।
    No Specifications