উপনিবেশবাদ ও বাঙালির সংস্কৃতি

আধুনিককালের উপনিবেশ মূলত ইউরোপীয়। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে বিশ্বের চার-পঞ্চমাংশ ভূ-জলসীমা জুড়ে ছিল এর বিস্তৃতি। এ সময়ে উপনিবেশিত বিশ্বের যাবতীয় সম্পদ নানা আদলে, নানা প্রকারে লুণ্ঠিত হয়ে জমা হয়েছে ইউরোপীয়দের মেট্রোপলে । প্রকৃতিপ্রদত্ত বিশ্ব বিভক্ত হয়ে গেছে ধনী-দরিদ্র নামে, জ্ঞান- বিজ্ঞানের কেন্দ্র ও প্রান্তের নতুন বাস্তবতায়। ঔপনিবেশিক শক্তি শুধু উপনিবেশের সম্পদ ও সামর্থ্যই নিঃশেষ করেনি, উপনিবেশিত বিশ্বের রাষ্ট্র, সমাজ ও জীবন-সংস্কৃতির আদলটাই পালটে দিয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ বাংলাও এর ব্যতিক্রম নয়। উপমহাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশের সূচনা হয় বাংলায়, পরে পুরো ভারতে। ফলে উপনিবেশবাদের বিনাশী প্রভাব বাংলায় ছিল অন্যদের চেয়ে অনেক গভীর উপনিবেশকালে উপমহাদেশজুড়ে চলেছে ধারাবাহিক লুণ্ঠন শোষণ-নিষ্পেষণ । গঙ্গা-যমুনা- কাবেরী- সিন্ধু পাড়ের সম্পদ পাচার করে সমৃদ্ধ হয়েছে টেমস পাড়ের লন্ডন । অন্যদিকে উপনিবেশের বণিক-রাষ্ট্রে চলেছে অবাধ দুর্বৃত্তায়ন, দুর্ভিক্ষ মন্বন্তরের দায়িত্বহীনতার রাষ্ট্রসংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় আনুকূলে অবৈধ অর্থবিত্তের ধনিক, বণিক ও গণবিরোধী জমিদারির উত্থানপর্ব, অনৈতিক বাণিজ্য-সংস্কৃতির পরিপোষণ, আবহমান গণমুখী গ্রামীণ সমাজকাঠাে বিপর্যয়। সিপাহি বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরাজ শাসনে পরিস্থিতি একটুও পাল্টায়নি বরং পরিশীলিত অবয়বে আরো সংহত হয়েছে। সব ছাড়িয়ে উপনিবেশবাদের সবচেয়ে অভিঘাতটি ছিল এ দেশীয়দের মন ও মননে অধস্তনতা ও হীনম্মন্যতার অধিষ্ঠান। এ অধিষ্ঠানকার সংঘটিত হয়েছে জ্ঞানচর্চার আড়ালে, জনমনে উপনিবেশকের - শ্রেষ্ঠত্ব এবং ভাষা-সংস্কৃতির অপরিহার্যতার যুক্তি প্রতিষ্ঠা করে, স্থানীয় ভাষাস ইতিহাস-ঐতিহ্যকে অবন্তন পর্যায়ে অবনমিত করে অন্যদিকে divide and rule নীতিকে উপমহাদেশে সংঘটিত হয়েছে মর্মের বিভা ভয়াল ভ্রাতৃঘাতী দাঙ্গা, মানবসভ্যতার ইতিহাসের অভিপ্রয়াণ (migration) ভৌগোলিক উপনিবেশকাল শেষ হয়েছে ঠিকই উপনিবেশকালের ভেদ-বিভেদের রাজনৈতিক স এই ঘোর আজও কাটেনি। আজও এখানে ফোনটি মাইনরিটি ও রিফিউজি রাজনীতির এজেন্ড উপনিবেশকের ইচ্ছান সৃ নিয়েই আলোচনা