Skip to Content
সংস্কার সংলাপ (সূচনা সূত্র) : রাষ্ট্র, নির্বাচন, শাসন-প্রশাসন ও সংবিধান

Price:

500.00 ৳


মিনি বিশ্বকোষ পাখি
মিনি বিশ্বকোষ পাখি
750.00 ৳
750.00 ৳
Rowley Jeffersons Awesome Friendly Adventure (PB)
Rowley Jeffersons Awesome Friendly Adventure (PB)
700.00 ৳
700.00 ৳

সংস্কার সংলাপ (সূচনা সূত্র) : রাষ্ট্র, নির্বাচন, শাসন-প্রশাসন ও সংবিধান

https://pathakshamabesh.com/web/image/product.template/16105/image_1920?unique=03c029b

500.00 ৳ 500.0 BDT 500.00 ৳

Not Available For Sale


This combination does not exist.

Terms and Conditions
30-day money-back guarantee
Shipping: 2-3 Business Days

 Delivery Charge (Based on Location & Book Weight)

 Inside Dhaka City: Starts from Tk. 70 (Based on book weight)

 Outside Dhaka (Anywhere in Bangladesh): Starts from Tk. 150 (Weight-wise calculation applies)

 International Delivery: Charges vary by country and book weight — will be informed after order confirmation.

 3 Days Happy ReturnChange of mind is not applicable

 Multiple Payment Methods

Credit/Debit Card, bKash, Rocket, Nagad, and Cash on Delivery also available. 

রাষ্ট্র ও শাসন সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে তার পিছনে কোনো না কোনো স্বার্থ গোষ্ঠীর চাপ, তাপ, সচেতন উদ্যোগ, প্রভাব-প্রণোদনা সর্বোপরি নাগরিক দাবি এবং রাজনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক দলসমূহের দৃঢ ইচ্ছা থাকতে হয়। বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিবর্তন, সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন ও সরকারি নীতি পরিবর্তনের বিষয়গুলো দেখলে দেখা যায় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণির ভেতর থেকে একান্ত নিজেদের প্রয়োজনেই করা হয়। যেমন সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি কিংবা বহুদলীয় থেকে একদলীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর, পুনরায় বহুদলীয় ব্যবস্থা ও সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন এসবে জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন হলেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা খুব বেশি ছিল না। নব্বইয়ের দশকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রবল আন্দোলনে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর একটি কাঠামো সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়, তার পিছনে দীর্ঘ সংগ্রাম ছিল। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন এ ব্যবস্থাধীনে করার পর তা সংবিধানের আর এক সংশোধনীর মাধ্যমে রহিত হয়ে যায়। তবে প্রথম থেকে সংবিধানের সংশোধনীগুলোর পটভূমি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সব সময় শাসক দল বা গোষ্ঠীর নিজস্ব প্রয়োজন থেকে সংশোধনীগুলো করা হয়েছে। এখন আবার সে পূর্বাবস্থায় তথা তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন চলছে। এসব পরি বর্তনের যে বৃত্তাকার পরিভ্রমণ বা একই বৃত্তে ঘুরপাক এটা যে শুধুই ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থায় অনেক কার্যকর পরিবর্তন প্রয়োজন; সুশাসনের জন্য নানা শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। দীর্ঘ মেয়াদে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের নানা বিষয়গুলো সকল সময়ে অধরা, অনাবৃত ও অনালোচিত থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচনের পর নব গঠিত সরকারগুলো পুরোনো কায়দার শাসন ব্যবস্থা সাজিয়ে নেন। এটিই যেন জাতির নিয়তি। ভালোমন্দ নির্বাচন হয়। কখনও ক্ষমতার পালাবদল হয়। কখনও হয় না। কিন্তু সুশাসন, স্ব-শাসন এবং জনস্বার্থে রাজনীতি, শাসন ও সরকারে যে সব বিষয়ে উত্তরণ ও উন্নয়ন দরকার রাজনৈতিক শ্রেণির সে সব বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না । ২০০৫-২০০৮, এ সময়ে ‘সংস্কার’ এর এক প্রবল ঝড় এসেছিল। সংস্কারের সঙ্গীতে আকাশ বাতাস মুখরিত ছিল কিছুদিন। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর সে ঝড় থেমে বাতাস উল্টো দিকে বইতে শুরু করলো। ‘সংস্কার’ ও ‘সংস্কারবাদী’ একটা ঘৃণ্য রাজনৈতিক গালি হয়ে উঠল। ২০১১ সনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যে নতুন সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার হয় তাতে সংবিধান ও রাষ্ট্র বিষয়ক সকল চিন্তা পুরোপুরি একটি ভিন্নতর সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ জোরেশোরে সংস্কার বিষয়ক আলাপ-আলোচনা চলমান।কেবলমাত্র সরকারের পরিবর্তন নয়; সরকারের এখতিয়ার ও ক্ষমতার সীমা বেঁধে দেয়ার স্থায়ী সাংবিধানিক বন্দোবস্ত দরকার— এ আলাপ ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পঞ্চাশ বছরের পরিণত এক রাষ্ট্র, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে এই রাষ্ট্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ভারসাম্য এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে পারেনি। আইনের শাসন পরিণত হয়েছে নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের শাসনে। প্রত্যেকবার নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশ অনিবার্য সংঘাতের মুখে পড়ে যায়, এখনো পর্যন্ত সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। এমতাবস্থায় শিক্ষাবিদ ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব হাজির করেছেন। রাষ্ট্র, নির্বাচন, সংবিধান ও শাসন-প্রশাসন প্রশ্নে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে বর্তমান পুস্তকে গভীর যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়েছে। বইটি পরিবর্তনকামী রাজনীতিবিদ, গবেষক, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীসহ যেকোনো সচেতন ও চিন্তাশীল পাঠকের বিপুল চিন্তার খোরাক জোগাবে, এ কথা হলফ করে বলা যায়। ২০২১-২০২২ থেকে সংস্কারের নানা প্রসঙ্গ নানাভাবে পুনরায় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাজনীতি মূলত এখনও নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়েই আবর্তিত। তবে বুদ্ধিজীবী বলতে যাদের বোঝায় তাদের একটি বড় অংশ শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু যেমন-মূদ্রা, ব্যাংক, ট্যাক্স, অর্থপাচার, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি ইত্যাদির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো সামনে আনেন না বা আনতে সংকোচ বোধে আড়ষ্ট থাকেন। কখনও সংষ্কার প্রসঙ্গ আসলেও তা আবারও নির্বাচনের চোরাগলিতেই ঢুকে পড়ে। তাই পুরোনো কিছু শাসনতান্ত্রিক প্রসঙ্গ এখানে নতুনভাবে অবতারণা করা হলো। এখানে চার পৃথক গুচ্ছে চারটি বৃহত্তর ভাগে সংস্কারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম গুচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রথম দুটি বিষয় হচ্ছে বর্তমান সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক বা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন পদ্ধতি (Proportional Representation) চালু করা প্রসঙ্গে এবং দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এক কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ব্যবস্থার বদলে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রবর্তনের প্রস্তাব। এই দুটি বিষযে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। পরের তিনটি বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না, কিছু বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন এবং শাসন বিধি সংস্কার করলেই তা করা সম্ভব। সে তিনটি বিষয় হচ্ছে যথাক্রমে জাতীয় বিকেন্দ্রীকরণ নীতি, দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের সাংগঠনিক কাঠামোকে রাষ্ট্রপতি সরকারের স্থলে সংসদীয় কাঠামোয় রূপান্তর করে একটি একক সিডিউলে সব স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা ও সর্বশেষে অনুপস্থিত, অক্ষম এং প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজ করার জন্য ‘পোস্টাল ব্যালট’ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। দ্বিতীয় গুচ্ছে মাঠ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক সাতটি প্রবন্ধ, তৃতীয় গুচ্ছে সরকারের নির্বাহী বিভাগের নানা নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে আটটি প্রবন্ধ এবং শেষ গুচ্ছে শিক্ষা বিষয়ক সাতটি রচনা স্থান পেয়েছে। ধরতে গেলে প্রতিটি রচনাই এক একটি স্বতন্ত্র মৌলিক চিন্তাকে আশ্রয় করে বিকশিত। প্রথম গুচ্ছের চারটি রচনার সাথে তিনটি দীর্ঘ পরিশিষ্ট যুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতি বিজ্ঞান ও প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের পরিশিষ্টগুলো কাজে লাগতে পারে। সংস্কার যদিও বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় বিষয় নয়, তবুও আশা করি সংস্কার নিয়ে চিন্তা যারা করছেন বা ভবিষ্যতে করবেন তারা কিছু চিন্তার খোরাক পাবেন। সংস্কার সংলাপের প্রথম পাঁচটি বিষয় নিয়ে ‘ইনিশিয়েটিভ ফর দ্যা প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি’ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ একটি গোল টেবিল বৈঠক করেছেন এবং সুজন প্রথম গুচ্ছের শেষের বিষয় ‘পোস্টাল ব্যালট’ নিয়ে ২ মার্চ ২০২৩ ভোটার দিবসের আলোচনায় বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন। দৈনিক প্রথম আলো ২ মার্চ ২০২৩ পোস্টাল ব্যালট বিষয়ক লেখাটির অংশবিশেষ সম্পাদকীয় পাতায় ছেপেছেন। সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এম. এ. মতিন অনুগ্রহ করে এ বইটির একটি মূল্যবান মুখবন্ধ লিখে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বইটির উপর তাঁর মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। তাঁকে আমার প্রাণঢালা শুভাশীষ। বইটির নানা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমি সচেতন। কিছু সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা যেত। সময় ও সম্পদ তাতে বাধা। তাই সবার ক্ষমাসুন্দর উদারতা প্রার্থনা করি।

Title

সংস্কার সংলাপ (সূচনা সূত্র) : রাষ্ট্র, নির্বাচন, শাসন-প্রশাসন ও সংবিধান

Publisher

Gronthik Prakashon

Number of Pages

192

Language

Bengali / বাংলা

Category

  • Development
  • Constitutional
  • Government
  • Politics
  • History
  • First Published

    AUG 2023

    রাষ্ট্র ও শাসন সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে তার পিছনে কোনো না কোনো স্বার্থ গোষ্ঠীর চাপ, তাপ, সচেতন উদ্যোগ, প্রভাব-প্রণোদনা সর্বোপরি নাগরিক দাবি এবং রাজনৈতিক শক্তি ও রাজনৈতিক দলসমূহের দৃঢ ইচ্ছা থাকতে হয়। বাংলাদেশের সাংবিধানিক পরিবর্তন, সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তন ও সরকারি নীতি পরিবর্তনের বিষয়গুলো দেখলে দেখা যায় তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাসক শ্রেণির ভেতর থেকে একান্ত নিজেদের প্রয়োজনেই করা হয়। যেমন সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে রাষ্ট্রপতি শাসিত পদ্ধতি কিংবা বহুদলীয় থেকে একদলীয় ব্যবস্থায় রূপান্তর, পুনরায় বহুদলীয় ব্যবস্থা ও সংসদীয় পদ্ধতিতে প্রত্যাবর্তন এসবে জনগণের অভিপ্রায়ের প্রতিফলন হলেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা খুব বেশি ছিল না। নব্বইয়ের দশকে নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার প্রবল আন্দোলনে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’-এর একটি কাঠামো সংবিধানে সন্নিবেশিত হয়, তার পিছনে দীর্ঘ সংগ্রাম ছিল। পরপর তিনটি জাতীয় নির্বাচন এ ব্যবস্থাধীনে করার পর তা সংবিধানের আর এক সংশোধনীর মাধ্যমে রহিত হয়ে যায়। তবে প্রথম থেকে সংবিধানের সংশোধনীগুলোর পটভূমি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে সব সময় শাসক দল বা গোষ্ঠীর নিজস্ব প্রয়োজন থেকে সংশোধনীগুলো করা হয়েছে। এখন আবার সে পূর্বাবস্থায় তথা তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সরকারে ফিরে যাওয়ার আন্দোলন চলছে। এসব পরি বর্তনের যে বৃত্তাকার পরিভ্রমণ বা একই বৃত্তে ঘুরপাক এটা যে শুধুই ‘নির্বাচনকেন্দ্রিক’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু নির্বাচন ছাড়াও রাষ্ট্র ও শাসন ব্যবস্থায় অনেক কার্যকর পরিবর্তন প্রয়োজন; সুশাসনের জন্য নানা শাসনতান্ত্রিক সংস্কার। দীর্ঘ মেয়াদে শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের নানা বিষয়গুলো সকল সময়ে অধরা, অনাবৃত ও অনালোচিত থেকেই যাচ্ছে। নির্বাচনের পর নব গঠিত সরকারগুলো পুরোনো কায়দার শাসন ব্যবস্থা সাজিয়ে নেন। এটিই যেন জাতির নিয়তি। ভালোমন্দ নির্বাচন হয়। কখনও ক্ষমতার পালাবদল হয়। কখনও হয় না। কিন্তু সুশাসন, স্ব-শাসন এবং জনস্বার্থে রাজনীতি, শাসন ও সরকারে যে সব বিষয়ে উত্তরণ ও উন্নয়ন দরকার রাজনৈতিক শ্রেণির সে সব বিষয়ে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না । ২০০৫-২০০৮, এ সময়ে ‘সংস্কার’ এর এক প্রবল ঝড় এসেছিল। সংস্কারের সঙ্গীতে আকাশ বাতাস মুখরিত ছিল কিছুদিন। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর সে ঝড় থেমে বাতাস উল্টো দিকে বইতে শুরু করলো। ‘সংস্কার’ ও ‘সংস্কারবাদী’ একটা ঘৃণ্য রাজনৈতিক গালি হয়ে উঠল। ২০১১ সনে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে যে নতুন সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার হয় তাতে সংবিধান ও রাষ্ট্র বিষয়ক সকল চিন্তা পুরোপুরি একটি ভিন্নতর সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ জোরেশোরে সংস্কার বিষয়ক আলাপ-আলোচনা চলমান।কেবলমাত্র সরকারের পরিবর্তন নয়; সরকারের এখতিয়ার ও ক্ষমতার সীমা বেঁধে দেয়ার স্থায়ী সাংবিধানিক বন্দোবস্ত দরকার— এ আলাপ ক্রমশ প্রবল হচ্ছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই পঞ্চাশ বছরের পরিণত এক রাষ্ট্র, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা হচ্ছে এই রাষ্ট্রে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ও ভারসাম্য এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে পারেনি। আইনের শাসন পরিণত হয়েছে নির্বাহী বিভাগ তথা সরকারের শাসনে। প্রত্যেকবার নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশ অনিবার্য সংঘাতের মুখে পড়ে যায়, এখনো পর্যন্ত সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। এমতাবস্থায় শিক্ষাবিদ ও শাসন বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ পাঁচটি সংস্কার প্রস্তাব হাজির করেছেন। রাষ্ট্র, নির্বাচন, সংবিধান ও শাসন-প্রশাসন প্রশ্নে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে বর্তমান পুস্তকে গভীর যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়েছে। বইটি পরিবর্তনকামী রাজনীতিবিদ, গবেষক, সমাজবিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীসহ যেকোনো সচেতন ও চিন্তাশীল পাঠকের বিপুল চিন্তার খোরাক জোগাবে, এ কথা হলফ করে বলা যায়। ২০২১-২০২২ থেকে সংস্কারের নানা প্রসঙ্গ নানাভাবে পুনরায় ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। রাজনীতি মূলত এখনও নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিয়েই আবর্তিত। তবে বুদ্ধিজীবী বলতে যাদের বোঝায় তাদের একটি বড় অংশ শুধু অর্থনৈতিক ইস্যু যেমন-মূদ্রা, ব্যাংক, ট্যাক্স, অর্থপাচার, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানি ইত্যাদির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছেন। রাজনৈতিক সংস্কারের বিষয়গুলো সামনে আনেন না বা আনতে সংকোচ বোধে আড়ষ্ট থাকেন। কখনও সংষ্কার প্রসঙ্গ আসলেও তা আবারও নির্বাচনের চোরাগলিতেই ঢুকে পড়ে। তাই পুরোনো কিছু শাসনতান্ত্রিক প্রসঙ্গ এখানে নতুনভাবে অবতারণা করা হলো। এখানে চার পৃথক গুচ্ছে চারটি বৃহত্তর ভাগে সংস্কারের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম গুচ্ছে পাঁচটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। প্রথম দুটি বিষয় হচ্ছে বর্তমান সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠের নির্বাচন ব্যবস্থার পরিবর্তে আনুপাতিক বা সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন পদ্ধতি (Proportional Representation) চালু করা প্রসঙ্গে এবং দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে এক কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ব্যবস্থার বদলে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ প্রবর্তনের প্রস্তাব। এই দুটি বিষযে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য হলে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে। পরের তিনটি বিষয়ে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন পড়বে না, কিছু বিদ্যমান আইনের পরিবর্তন এবং শাসন বিধি সংস্কার করলেই তা করা সম্ভব। সে তিনটি বিষয় হচ্ছে যথাক্রমে জাতীয় বিকেন্দ্রীকরণ নীতি, দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের সাংগঠনিক কাঠামোকে রাষ্ট্রপতি সরকারের স্থলে সংসদীয় কাঠামোয় রূপান্তর করে একটি একক সিডিউলে সব স্থানীয় নির্বাচন সম্পন্ন করা ও সর্বশেষে অনুপস্থিত, অক্ষম এং প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার প্রয়োগ সহজ করার জন্য ‘পোস্টাল ব্যালট’ সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। দ্বিতীয় গুচ্ছে মাঠ প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক সাতটি প্রবন্ধ, তৃতীয় গুচ্ছে সরকারের নির্বাহী বিভাগের নানা নীতি ও কার্যক্রম নিয়ে আটটি প্রবন্ধ এবং শেষ গুচ্ছে শিক্ষা বিষয়ক সাতটি রচনা স্থান পেয়েছে। ধরতে গেলে প্রতিটি রচনাই এক একটি স্বতন্ত্র মৌলিক চিন্তাকে আশ্রয় করে বিকশিত। প্রথম গুচ্ছের চারটি রচনার সাথে তিনটি দীর্ঘ পরিশিষ্ট যুক্ত করা হয়েছে। রাজনীতি বিজ্ঞান ও প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের পরিশিষ্টগুলো কাজে লাগতে পারে। সংস্কার যদিও বাংলাদেশে খুব জনপ্রিয় বিষয় নয়, তবুও আশা করি সংস্কার নিয়ে চিন্তা যারা করছেন বা ভবিষ্যতে করবেন তারা কিছু চিন্তার খোরাক পাবেন। সংস্কার সংলাপের প্রথম পাঁচটি বিষয় নিয়ে ‘ইনিশিয়েটিভ ফর দ্যা প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি’ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ একটি গোল টেবিল বৈঠক করেছেন এবং সুজন প্রথম গুচ্ছের শেষের বিষয় ‘পোস্টাল ব্যালট’ নিয়ে ২ মার্চ ২০২৩ ভোটার দিবসের আলোচনায় বিষয়টাকে গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন। দৈনিক প্রথম আলো ২ মার্চ ২০২৩ পোস্টাল ব্যালট বিষয়ক লেখাটির অংশবিশেষ সম্পাদকীয় পাতায় ছেপেছেন। সে জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের মাননীয় বিচারপতি এম. এ. মতিন অনুগ্রহ করে এ বইটির একটি মূল্যবান মুখবন্ধ লিখে আমাকে কৃতার্থ করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমীর মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বইটির উপর তাঁর মূল্যবান মতামত দিয়েছেন। তাঁকে আমার প্রাণঢালা শুভাশীষ। বইটির নানা সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমি সচেতন। কিছু সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা যেত। সময় ও সম্পদ তাতে বাধা। তাই সবার ক্ষমাসুন্দর উদারতা প্রার্থনা করি।
    No Specifications