Skip to Content
Filters

author.name

মামুনুর রশীদ নদভি

মামুনুর রশীদ নদভি মোমেনশাহী জেলার মুক্তাগাছা থানাধীন গাড়াইকুটি গ্রামটিকে ‘আলেমদের গ্রাম’ বলা চলে। এ গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরেই কেউ-না-কেউ হাফেজ, মাওলানা, কিংবা মুফতি। এরই একটি শিক্ষিত পরিবারের নাম ‘মাস্টার বাড়ি’। জনাব হাসান আলী মাস্টার হাফিজাহুল্লাহ এ বাড়ির কর্তা-পুরুষ। পেশায় তিনি একজন স্কুল শিক্ষক। দীনদার ও মান্যবর ব্যক্তি হিসেবে এলাকায় বেশ নামডাক। তাঁর চার ছেলের প্রত্যেকেই ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। এ পরিবারেই ১৪১৪ হিজরির ১৮ রজব (মোতাবেক ১৯৯৪ ঈসায়ির পহেলা জানুয়ারিতে) মামুনুর রশীদ নদভি জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি শান্ত প্রকৃতির। শিক্ষক পিতার ইচ্ছা ছিল এই ছেলেকে ডাক্তার বানানোর। কিন্তু পরিবারের বড় ছেলে মাওলানা রেজাউল করীম চাচ্ছিলেন তার ছোট ভাইদের হাফেজুল কুরআন ও আলেম বানাবেন। পরে বড় ভাইয়ের ইচ্ছাই পূর্ণতা পায়। ২০০৪ সালে মামুনুর রশীদ ও তার ছোট আবদুল্লাহ মারুফকে দিগলগাঁও গ্রামের মাআরিফুল কুরআন হাফিজিয়া মাদরাসায় নুরানি বিভাগে ভর্তি করে দেওয়া হয়। এ মাদরাসায় নুরানি-নাজেরা শেষ হলে তাদের দুজনকে মনতলা হামিউস সুন্নাহ মাদরাসায় ভর্তি করে দেওয়া হয়। কিশোর মামুন এখান থেকেই ২০০৯ সালে হিফজ সমাপ্ত করেন। হিফজ শেষ হলে তাকে মোমেনশাহীর প্রসিদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামেয়া আরাবিয়া মাখজানুল উলূমে ভর্তি করা হয়। তাইসির ও মিজান জামাত এখানে পড়েন। তারপর ২০১১ সালে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার সৈয়দপুরের জামিয়া এমদাদিয়ায় নাহবেমিরে ভর্তি হন তিনি। এখানে এক বছর পড়ে ভর্তি হন দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে। হেদায়াতুন্নাহু থেকে জালালাইন পর্যন্ত এই জামেয়ায় ইলম অর্জন করেন। এরপর জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ থেকে ২০১৮ সালে তাকমিল (দাওরায়ে হাদীস) সমাপন করেন। এ বছরই রমজান মাসে হিন্দুস্তানে ইলমি রিহলা করেন। তিনি ১৪৩৯ হিজরির শাওয়ালের ১৭ তারিখে (পহেলা জুলাই ২০১৮) দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামার ‘কুল্লিয়াতুল লুগাহ’য় (আরবি ভাষা অনুষদে) দাখেলা নেন। নদওয়ার বরকতময় পরিবেশে মুফাক্কিরে ইসলাম আল্লামা সাইয়েদ রাবে হাসানি নদভি রহ. ও আল্লামা সাইয়েদ বেলাল আব্দুল হাই হাসানি নদভির একান্ত তত্ত্বাবধান লাভ করেন। বরেণ্য আরবি সাহিত্যিক মাওলানা কায়সার হুসাইন মাদানি নদভির নিবিড় সান্নিধ্যে ধন্য হন। তা ছাড়া দারুল উলুম দেওবন্দ, ইমারতে শরিয়া বিহার, আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটি, মাওলানা আজাদ ইউনিভার্সিটিসহ হিন্দুস্তানের বিখ্যাত বিদ্যাপীঠে ইলমি সফর করে সেখানকার কয়েকজন উস্তাজের কাছে সীরাত, ইতিহাস, ইসলামি সাকাফাত ও আরবি সাহিত্যের বিশেষ সবক গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের অনুবাদ করেছেন। ইমাম ইবনে হাজম আন্দালুসি রহ.-এর জাওয়ামেউস সীরাহ, আল্লামা মুহিব্বদ্দীন তাবারি রহ.-এর খোলাসাতুস সিয়ারি সায়্যিদিল বাশার (সীরাতুন্নবী), আল্লামা ইবনে ফজলুল্লাহ উমরি রহ. রচিত মাসালিকুল আবসার ফি মামালিকিল আমসার গ্রন্থের ফি মামলাকাতিল হিন্দ ওয়াস সিন্দ অধ্যায়টি ‘সালতানাতে হিন্দ’ নামে অনুবাদ করেছেন। মৌলিক গ্রন্থের মধ্যে আপাতত প্রকাশ হচ্ছে তার দীর্ঘদিনের গবেষণা ‘ইউরোপীয় রেনেসাঁয় মুসলমানদের এহসান’ নামক বইটি; এবং আরবি ভাষায় রচিত বাংলাদেশেরে ইতিহাস ‘দিরাসাত ও মাবাহিস ফি তারিখিল বাঙ্গাল’ (প্রকাশিতব্য) নামক বইটি। এগুলো ছাড়াও সীরাত, ইতিহাস, আরবিসাহিত্য ও সাকাফত প্রভৃতি বিষয়ে তার অনেকগুলো পাণ্ডুলিপি তৈরি হয়ে আছে, শীঘ্রই সেগুলো আলোর মুখ দেখবে ইনশাআল্লাহ। অধ্যয়ন ও লেখালেখির মধ্য দিয়েই তার এখনকার সময় কাটছে। আল্লাহ তাআলা তার হায়াতে বরকত দান করুন! আমিন।