হায়দার বসুনিয়া
হায়দার বসুনিয়া শিল্প-সাহিত্য দেশ ও কালের সীমাবদ্ধ গণ্ডির মধ্যে থাকে না। আবার শিল্পী তার সৃষ্ট রচনার ক্ষেত্রে কোনাে স্থানের সীমারেখা রাখতে পারে না। তবে বদ্ধমূল ধারণা যে, নাগরিক জীবনে শিল্পীর বিকাশ ঘটে বেশি। হ্যা, তা হতে পারে, কারণ নাগরিক পরিবেশে প্রচার মাধ্যম বেশি। কিন্তু শিল্প রচনার ক্ষেত্র যে শুধু নাগরিক পরিবেশে ঘটতে পারে এমনটা নয়। নিভৃত পল্লীতে বসবাস করেও উস্কৃষ্ট শিল্প সৃষ্টি করা সম্ভব। এর প্রমাণ রেখেছেন হায়দার বসুনিয়া। তিনি নিভৃত পল্লীতে বাস করেও উপন্যাস, নাটক ও কাব্য রচনা করেছেন নিরলসভাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি নিয়ে তিনি ফিরে যান মাটির টানে, পৈত্রিক নিবাস কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার নাজিম খাঁ ইউনিয়নের মনারকুঠি গ্রামে। ১৯৩৯ সালে ৩০ নভেম্বর তাঁর জন্ম। লেখাপড়া শেষে তিনি পেশা হিসেবে বেছে নেন স্কুলের শিক্ষকতা। শিক্ষকতার পাশাপাশি ও পারিবারিক জীবনের ঘানি টানার ফাঁকে ফাঁকে যেন বিশ্রাম নিয়েছেন সাহিত্যাঙ্গণে। তিনি ৫০টি উপন্যাস, ৭টি নাটক ও ৬টি কাব্য রচনা করেছেন। ইতােমধ্যে তাঁর সেতু, চলাে যাই তেপান্তরের মাঠে, দুটো পােড়াে বাড়ির ইতিকথা, তুলাে মনি, ভাগ্যান্বেষী ভবঘুরে, চিন্তা নদীর পাড়ে, আপন মনের আরশি, পরমতম বর্গাদাতা, স্বর্গচ্যুতির ইতিকথা, মরা তিস্তার দ্যোতক চিহ্ন, কবিরের ভিটামাটি উপন্যাস ও জেগে আছি, অমােঘ সায়াহ্ন, হংস সংলাপ ও রঙিন চশমা কাব্যগ্রন্থ এবং ধর্মীয় প্রবন্ধের বই সিরাজম মুনিরা ও তাঁর উম্মতগণ অন্যতম। নিভৃতচারী লেখক হায়দার বসুনিয়া মানুষের জীবন রহস্য, মনস্তত্ব ও জীবন সংগ্রাম দেখেছেন। মানুষের খুব কাছ থেকে। আর কাদামাটির মতাে মাখামাখি করে গড়ে তুলেছেন তার শিল্প প্রতিমা। তা দৃশ্যমান না হলেও হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়। আর উৎকৃষ্ট শিল্পের এটাই ধর্ম।