বনফুল কিশোর সমগ্র ১

বাংলা সাহিত্যের ড. বলাইচাঁদ মুখােপাধ্যায় শেষাবধি ‘বনফুল’ রূপেই চিহ্নিত হয়েছেন। চিকিৎসক বলাইচাঁদ হলেন কথাশিল্পী ‘বনফুল। বনফুল হয়েও তিনি অভিজাত বনফুল। সৌন্দর্যেবর্ণে-গন্ধে তিনি স্বতন্ত্র। এই স্বাতন্ত্র নিয়েই তিনি সৃষ্টির উল্লাসে মগ্ন। বহু ব্যক্তির বহু বিচিত্র মুহূর্তের ভাব, ভাবনা ও অনুভূতির তিনি রূপকার চিকিৎসক ও বৈজ্ঞানিকের দৃষ্টি তার সহজাত। চিকিৎসক বনফুল অণুবীক্ষণ যন্ত্রের তলায় জীবনের ও সমাজের প্রতিদিনের অনেক নির্ভুল তথ্যকে বিচার করেছেন—আর শিল্পী বনফুল সংস্কারমুক্ত দৃষ্টিতে জীবনের গভীর ছবি এঁকেছেন। দেখা-অদেখা জীবনের অজস্র রূপের ছবি আঁকায় তিনি তন্ময় এবং সার্থক। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টি এই ছবিসৃষ্টির ক্ষেত্রে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় মগ্ন এবং সেই সাধনায় তার সফলতাও অস্বীকার করবার নয়। উপন্যাসে, কবিতায়, রঙ্গব্যঙ্গে, ছােটগল্পে, নাটকে তার এই শক্তির পরিচয় নানাভাবে উদঘাটিত হয়েছে। জীবনকে শিল্পে ধরে রাখার ক্ষেত্রে শিল্পরীতির প্রয়ােগও নতুন নতুন পথ ধরে এগিয়ে গেছে। পূর্ণতাকে স্পর্শও করেছে। বয়স্কদের মনের চিন্তার ও রসজগতের পরিচয় বনফুল বিপুল সৃষ্টির মধ্যে যেমন রেখে গেছেন—তেমনি ভােলেননি শিশু ও কিশােরজগতের কথাও। কারণ সাহিত্যের ক্ষেত্রে শিশুমনও একটি মূল্যবান উপাদান। প্রাণের আনন্দে চঞ্চল, স্বপ্ন-কল্পনায় গড়া, আবেগে উচ্ছ্বসিত, জিজ্ঞাসায় ব্যাকুল শৈশব ও কৈশােরের মধ্যে যে রহস্য লুকিয়ে আছে—তা অপরিচিত এক মহাদেশ আবিষ্কারেরই অনুরূপ। তাদের মনের আকাশে প্রতি মুহূর্তে কল্পনার যে ইন্দ্রধনু বিচিত্র বর্ণে ফুটে উঠছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে—তুলির রেখায় তাকে জাগিয়ে তােলা শক্তিমান শিল্পী ছাড়া অসম্ভব। ছােটদের নীতিশাসনে বেঁধে রাখা অভিভাবকদের বড় কর্তব্য হলেও যা তাদের মনকে প্রসারিত করবে, কল্পনাশক্তিকে গভীর করে তুলবে, তাদের মনের মধ্যে স্থায়ী কোন প্রভাব আনতে পারবে—এই বিষয়গুলি সম্বন্ধে চিন্তা করাও অকর্তব্য নয়। শিশু-কিশােরের এই মানসিক পুষ্টির জন্য তাদের উপযােগী সাহিত্য রচনা প্রয়ােজন। কেননা এই মানসিক পুষ্টিই আগামী লােকসমাজকে জ্ঞানে-কর্মে-মহত্ত্বে পূর্ণতা দেবে।