জলরঙে আঁকা জীবন

আমার প্রথম কাব্য জলরঙে আঁকা জীবন’ এর বাছাইকৃত বত্রিশটি কবিতার রচনাকাল ২০১৩-২০১৯ সাল। গত বইমেলায় এটি পাঠকের কাছে আসার কথা ছিল। কিন্তু নানা কাজের ব্যস্ততায় তা আর হয়ে ওঠেনি। তাই এটি পাঠকের হাতে পৌছতে পৌছতে বছরটিই ফুরিয়ে যাচ্ছে! তাতে কি! তাড়াহুড়াের বদলে আরাে মনােযােগ দেয়ায় কবিতা বাছাই ও এর প্রতি আমার লালিত আবেগ, অনুভব ও কল্পনা শব্দের-ছন্দের বন্ধনে আরাে প্রগাঢ় হয়েছে বলে ধারণা করি।এ কবিতাগুলাে লেখায় আমার অনুপ্রেরণায় কোনাে কাল্পনিক মানসী’ বা ‘ইটার্নাল সি' নেই। যাকে উৎসর্গ করে কবিতাগুলাে লিখেছি, সে-ই কি পুরাে আদল নিয়ে হাজির হয়েছে এতে! তা কি কখনাে হয়! বাস্তবের রক্ত-মাংসের . নারীকে যদি কল্পনার রংধনুর ছটায় নানা ভাবে, বিভিন্ন আয়ােজনে, একাকীত্বে, ব্যস্ততার মনভােলা লগ্নে কাছে-দূরে খুঁজে, হারিয়ে, আবার কাছে পেয়ে অনুরণিত না-ই হব, তবে। তা আর কবিতা কীসের! কবিতা তাে বাস্তবের ঘেরাটোপ থেকে পাঠককে কল্পনার আকাশে পাখি হয়ে ওড়ার মাধ্যম! তাই বলে তা আকাশ-কুসুমও নয়! বাস্তবতার শর্তেই কল্পনাকে মণিহার করে পুষ্পমালা রচনার অনবদ্য প্রয়াস কবিতা! রবীন্দ্রনাথের কবিতা কল্পনালতা! | রােম্যান্টিক ধাঁচের গীতিকবিতারই জয়জয়কার, এ কাব্যে। এর পাশেই রয়েছে গল্পকবিতা। গল্পকে কবিতার আদলে বিন্যাসের দৃষ্টান্ত এতে লক্ষণীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা গদ্যকবিতার যে চল ‘পুনশ্চ’তে দেখা দিয়েছিল, তা এ কাব্যে নিজস্ব বয়ানে উপস্থিত থেকেছে সমকালীন জীবনবাস্তবতার আধারে। রূপকথার অবারিত জগতটিকে প্রেমের বহুধারা কল্লোলে প্রবাহিত করার প্রয়াস কবিতাগুলােতে লক্ষণীয়। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পৌরাণিক কিছু অনুষঙ্গ।। এতে ছন্দের বিন্যাস মূলত মাত্রাবৃত্তনির্ভর। পাশাপাশি অক্ষরবৃত্তের সঙ্গে গদ্যছন্দ মিলেমিশে, মিলপ্রধান স্বরবৃত্তকে ঠাই দিয়ে সবমিলিয়ে ছন্দের কোলাজ এতে এনেছে স্বকীয় আবহ। ব্যক্তিমনের সংবেদনারাশিকে বহুজনের উদ্দীপনা-অনুভবে ছুঁয়ে দিতে এ আয়ােজন।