বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-প্রকৃতি ও জলবায়ুর তারতম্যের কারণে এক বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদজগতের সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি দেশের অভ্যন্তরে এলাকাভিত্তিক একই গাছের মধ্যে ভিন্নতাও পরিলক্ষিত হয়। যেমন সাতকড়া সিলেটের জাফলং অঞ্চলে ভালো হয়, নরসিংদীর বেলাবোর লটকন অধিকতর সুস্বাদু, যশোরের খেজুরের গুড় বিখ্যাত, বাবলা-বৈচির মতো কাঁটাযুক্ত গাছের আধিক্য দেখা যায় ঝিনাইদহে। আবার বাগেরহাট জেলার নারিকেল শাঁসের পুরুত্ব সর্বাধিক। গোটা দেশ জুড়েই কম-বেশি এ ধরনের বৈচিত্র্য দেখা যায় গাছগাছালির মধ্যে। আমাদের বসতবাড়ির আশে-পাশে, বন-জঙ্গলে অনেক পরিচিত ও অপরিচিত গাছপালা রয়েছে।
এইসকল গাছপালার ওপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল হয়ে বেঁচে আছে মানুষসহ সকল প্রাণিকুল। কাঠ, জ¦ালানি, ফুল-ফল, পশুখাদ্য, শোভাবর্ধক ও ভেষজ উদ্ভিদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে আমাদের জানা দরকার কোন্ উদ্ভিদ কোন্্ কাজে লাগে এবং কোন্ এলাকায় কোন্ গাছ ভালো জন্মে। একই গাছের নাম বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন হতে দেখা যায়। গাছের ভিন্ন ভিন্ন নামের সাথে সমন্বয় সৃষ্টি করার জন্য উদ্ভিদতাত্তি¡ক অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক নাম জানা বিশেষ প্রয়োজন। আমাদের দেশে শত শত বছরব্যাপী প্রচলিত চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু কোন্ গাছ কোন্ কাজে ব্যবহৃত হয়, তা আমরা অনেকেই ভালোভাবে জানি না। মানুষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে অতি প্রয়োজনীয় অনেক গাছপালা কালের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ জন্য আমাদের সকল উদ্ভিদপ্রজাতির সাথে পরিচয় থাকা প্রয়োজন।
রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যাল্স লিমিটেড কর্পোরেট ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাÐের সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত রয়েছে। যেমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ, শিক্ষাবৃত্তিসহ প্রদানসহ শিক্ষাখাতে নানা প্রকার সহযোগিতা, বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির প্রভাব বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা সৃষ্টি ও বিপন্ন উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মসূচিতে সহায়তা প্রদান ইত্যাদি। জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১১ সালে রেডিয়েন্ট বিশে^র মহাবিপন্ন তালিপাম বৃক্ষের ফুল-ফল-বীজ ও চারার তথ্য ও আলোকচিত্র নিয়ে এবং ২০১৪ সালে দেশের বিলুপ্তপ্রায় দুর্লভ গাছ-গাছালির ছবি সম্বলিত ডেস্ক ক্যালেন্ডার তৈরি করে সারাদেশে হাজার-হাজার কপি বিতরণ করে। রেডিয়েন্ট ফার্মার সহযোগিতায় ২০১০ সালে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অবস্থিত বিশে^র একমাত্র মহাবিপন্ন তালিপাম বৃক্ষের চারা উৎপন্ন করে দেশব্যাপী রোপণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। উপরোক্ত কাজের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন ফুল নিয়ে ‘ফুলে ফুলে বসন্ত’ শিরোনামে ছোট্ট একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে সুধীসমাজের কাছে বিতরণ করা হয়। এভাবে প্রায় প্রতি বছরই কোনো-না-কোনো বিষয়ে রেডিয়েন্ট বই-পুস্তক, বুকলেট ইত্যাদি প্রকাশ করে যাচ্ছে, যা এদেশের সম্মানিত চিকিৎসকমÐলী ও সুধীমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ‘ফুলে ফুলে বসন্ত’ পুস্তিকাটি প্রকাশের পর উদ্ভিদপ্রেমী সুধীজন আমাদের পরামর্শ দেন ব্যাপক পরিসরে দেশের গাছগাছালির পরিচিতিমূলক গ্রন্থ প্রকাশের। শুভানুধ্যায়ী চিকিৎসক ও সুধীজনের পরামর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে এবং বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করেÑ আমরা বর্তমান গ্রন্থটি প্রকাশনার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এই গ্রন্থে উদ্ভিদের সচিত্র বর্ণনাসহ স্থানীয় ও বৈজ্ঞানিক নাম, আবাসস্থল, বিস্তৃতি, গুরুত্ব, ঔষধি গুণাগুণ, বংশবিস্তার, বর্তমান অবস্থা ও সংরক্ষণ বিষয়ে তথ্য সংযোজন করার ফলে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং আগ্রহীগণের বাংলাদেশের উদ্ভিদপ্রজাতি সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানার সুযোগ তৈরি হবে। গ্রন্থটিতে উদ্ভিদপ্রজাতিসমূহের বৈজ্ঞানিক নামের পাশাপাশি স্থানীয় প্রচলিত বাংলা নামের বর্ণমালানুক্রমিক সূচি থাকায় স্বল্পসময়ে ঈপ্সিত উদ্ভিদটি খুঁজে পাওয়া অনেক সহজ হবে।
গ্রন্থটি রচনায় নানাভাবে সহায়তা দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বরেণ্য উদ্ভিদবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবুল হাসান, অধ্যাপক ড. রাখহরি সরকার, গ্রন্থটি সম্পর্কে সুচিন্তিত মতামত প্রদান করেছেন আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন (ওটঈঘ-ওহঃবৎহধঃরড়হধষ টহরড়হ ভড়ৎ ঈড়হংবৎাধঃরড়হ ড়ভ ঘধঃঁৎব)এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর জনাব রাকিবুল আমিন এবং গ্রন্থটি বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভুল করার জন্য রিভিউ করে দিয়েছেন স্বনামধন্য ট্যাক্সোনমিস্ট, বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জনাব ড. সরদার নাসির উদ্দিন। তাঁদের সবার প্রতি রইল আমাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নিরলসভাবে কঠোর পরিশ্রম করে গ্রন্থটি রচনা করেছেন ড. আখতারুজ্জামান চৌধুরী। এ জন্য তাঁকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।
এই গ্রন্থ উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষার্থী, গবেষক ও জনমানুষের জন্য দেশের উদ্ভিদপ্রজাতিসমূহ চেনা-জানা সহজতর করবে বলে আশা করা যায়। বিশেষ করে গাছগাছালির প্রতি যাঁদের দুর্বলতা রয়েছে, দেশের সামগ্রিক উদ্ভিদবৈচিত্র্য, এর উপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাঁদের জন্য বইটি সহায়ক ভ‚মিকা পালনে সক্ষম হলে আমাদের প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
বিনীত
মো. নাসের শাহরিয়ার জাহেদী
চেয়ারম্যান, রেডিয়েন্ট পাবলিকেশন্স লিমিটেড