এম মনসুর আলী

যুদ্ধের নিয়ামক অস্ত্র ও অর্থ দুই-ই। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি দুঃশাসক ও বর্বর সৈন্যরা কেবল অস্ত্র হাতেই ঝাপিয়ে পড়েছিল বাঙালি নিধনে। নিরস্ত্র । বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকালে মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী শত্রুপক্ষকে সমরাঙ্গণের পাশাপাশি অর্থনৈতিক যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন—সে-তথ্য এখনও অনালােচিত। এম মনসুর আলী তাঁর রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞায় ছিলেন অনন্য। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র, অর্থনৈতিক বিষয়ে স্নাতকোত্তর, যাঁর রাজনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে উঠেছিল। ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন থেকে ভাষা আন্দোলন, স্থানীয় কৃষক আন্দোলন, আইয়ুববিরােধী আন্দোলনে স্বৈরাচারী বুটেরতলায় যৌবন উৎসর্গকারী—বারবার কারাবরণ ও রাজপথে অকুতােভয়, বঙ্গবন্ধুর যােগ্যতম সারথি, '৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে একজন আইনমন্ত্রী হিসেবে '৫৬-এর শাসনতন্ত্র প্রণয়ন, '৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, '৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়া অভিজ্ঞ বিপ্লবী এই নেতা ছিলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রধানমন্ত্রীও। '৭১-এ পাকসরকার জাতীয় বাজেটের ৬০% যুদ্ধের জন্য বরাদ্দ রাখার হঠকারি সিদ্ধান্তের ফলে। পাকিস্তানের জনগণ ভুট্টো-ইয়াহিয়াবিরােধী হওয়ায় মাত্র ৪ মাসেই ঘটে মনস্তাত্ত্বিক পরাজয়। কেননা এম। মনসুর আলী জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতাে। সাহায্যকারী সংস্থাকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে। শত্রুপক্ষকে অর্থনৈতিক যুদ্ধে পরাস্ত করেছিলেন। খুব সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া সততা ও দেশপ্রেমের পরীক্ষায় সমাদৃত জননন্দিত এই নেতার জীবন বীরত্ব ও করুণগাথায় এই প্রথম তুলে এনেছেন লেখক সালিম সাবরিন। নিঃসন্দেহে ব্যক্তির জীবনীর মধ্য দিয়ে জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে। উঠেছে এ-গ্রন্থটি ।