আবু হাসান শাহরিয়ারের শ্রেষ্ঠ কবিতা

বাঙলা কবিতার এক সার্বভৌম অধ্যায়ের নাম আবু হাসান শাহরিয়ার (১৯৫৯- )। কবিতাকে তিনি একার সন্ন্যাস’ বলেন। বিশ শতকের সাতের দশকে আবির্ভাব। তবে, দশকচর্চার ঘাের বিরােধী; বলেন- 'দশক গৌণ কবিদের আশ্রয়’ । নিরন্তর সাধনায় নিজেকে তিনি বারবার ভেঙেছেন এবং নতুন অনুষঙ্গে বিনির্মাণ করেছেন। নিজস্ব স্বরভঙ্গি, বায় চিত্রকল্প, পরাবাস্তব ঘাের, কালাতিরিক্ত ব্যঞ্জনা ও প্রকাশকরণের নতুনত্বে রচনা করেছেন বাঙলা কবিতার নতুন বাঁক। কী ছন্দে কী ছন্দহীনতায়- উভয় ক্ষেত্রেই সমান সাবলীল। টানাগদ্যের ছদ্মাবরণে অক্ষরবৃত্তের নতুন ছন্দোবন্ধ- অমিল বাক্যে চলতে চলতে শেষ দুটি বাক্যে অন্ত্যমিল- বাঙলা কবিতায় এই নতুন ছন্দপ্রকরণের জনক আবু হাসান শাহরিয়ার। এছাড়াও আবহমান বাঙলা কবিতায় যুক্ত করেছেন 'ষষ্ঠীপদী’ নামের নতুন এক আঙ্গিক। নদীতীরবর্তী ব্রাত্য জনপদে ঘুরে-ঘুরে প্রান্তিক জীবনের বহুরৈখিক বিস্তার প্রত্যক্ষকরা তার যাপিত জীবনের অংশ। সেখান থেকে কুড়িয়ে আনেন জীবনের জলরঙে আঁকা হাজার বছরের আয়ুষ্মতী শব্দাবলি। ব্রাত্যজীবন ও লােকনিজস্বতার বিপুল ভাড়ার তার কবিতা। পুরাণের চরিত্ররা তার কবিতায় জলের ভুবনে মাছের মতাে সাবলীল আসা-যাওয়া করে। দীক্ষিত পাঠকের মুখে মুখে ফেরে তার প্রবাদপ্রতিম অসংখ্য পঙক্তি। এককথায়, আবু হাসান শাহরিয়ারের কবিতা এক বহুরৈখিক শব্দজনপদ, হাজার অতীতকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যত্বর্তী বৃহত্তর সমকালের দিকে যার যাত্রা। আবু হাসান শাহরিয়ারের শ্রেষ্ঠ কবিতার প্রথম প্রকাশ ২০০৩ সালে। এক-দেড় বছরের মধ্যেই নিঃশেষিত। সে-সংকলনে কবির ৮টি কবিতার বই থেকে বাছাইকৃত কবিতা সূচিবদ্ধ হয়েছিল। ২০০৫-এ দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশকালে আরও দুটি বইয়ের বাছাইকৃত কবিতা যুক্ত হওয়ায় বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০-এ। আরও একবই কবিতা নিয়ে ২০১০-এ তৃতীয় সংস্করণ। ভাষাচিত্র থেকে প্রকাশিত এই সংস্করণে ১৩টি বইয়ের কবিতা স্থান পেয়েছে। উল্লেখ্য, কবির এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও ১৩। কালজয়ী কবিরা একইসঙ্গে মহাকালের প্রতিনিধি এবং সমকালের হিসাবরক্ষক। বাঙলা কবিতায়, জীবনানন্দ দাশের পর, বৃহত্তর কালের ক্যানভাসে যে-স্বল্পসংখ্যক কবির বিচরণ, আবু হাসান শাহরিয়ার সেই বিরলপ্রজদের একজন। এই শ্রেষ্ঠ কবিতাই এর উৎকৃষ্ট প্রমাণ।