হিন্দু ধর্ম ও হিন্দু সমাজ

‘হিন্দুধর্ম এবং হিন্দুসমাজ’ গ্রন্থটিও গবেষণা-গ্রন্থ, তবে উদ্দেশ্য সর্বসাধারণ বিধায় রচিত হয়েছে ভিন্ন আঙ্গিকে। হিন্দুস্থানে জন্ম নেয়া সবধর্ম হিন্দু হলেও বৌদ্ধ, জৈন, শিখ প্রভৃতি ধর্মকে এখন আর হিন্দু বলা হয় না। হিন্দু বলতে এখন কেবল শাক্ত, বৈষ্ণব, শৈব। প্রভৃতি বােঝায়। এই ধর্মের অনুসারীদের প্রত্যেকেই নিজেদেরে হিন্দু বলায় এবং এদের মতাদর্শে প্রচুর মিল থাকায়, অনেকেই বুঝতে পারেন না, কে কোন উপমতের অনুসারী। কিন্তু অমিল বা পার্থক্যও একেবারে কম নয়। ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা থেকে শুরু করে ইহ ও পারলৌকিক বহু আচার-অনুষ্ঠানেই এই পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। বাংলা ভাষায় রচিত ধর্মীয়গ্রন্থ সমূহে এই বিষয়টা স্পষ্টভাবে উপস্থাপিত নয় বিধায়, অনেকেই বিভ্রান্ত হন। একে অপরকে ভ্রান্ত মনে করেন। আসলে অন্যান্য ধর্মের মতাে হিন্দুধর্মও বিভিন্ন শাখাউপশাখায় বিভক্ত। সঙ্গত কারণে হিন্দু ধর্মের কোনাে একটি শাখার বই পড়ে, কেবল সেই শাখা বা মতের শ্রেষ্ঠত্ব বা গুরুত্বের কথা জানা যায়। সেই মতের উপাস্য, ধর্মগুরু, প্রচারক বা প্রবর্তকের নানা উপদেশ বা তাঁদের নানা লৌকিক-অলৌকিক কাহিনিই এসব গ্রন্থে প্রত্যক্ষ হয়। কিন্তু অখণ্ড বা মল যে হিন্দ-দর্শন, সেসব গ্রন্থে তা উপেক্ষিত বা অদৃশ্যই থেকে যায়। কী কারণে এই বিভক্তি, বিভিন্ন সম্প্রদায় কীভাবে ঈশ্বরকে ভাবছেন এবং ধর্মগ্রন্থসমূহ . কীভাবে হিন্দুধর্মকে প্রকাশ করছে, মূলত এই বিষয়গুলােই অতি সংক্ষেপে আলােচ্য গ্রন্থে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্য প্রচুর পরিশ্রম স্বীকার পূর্বক হিন্দু সমাজে কলংক হয়ে থাকা কিছু রীতির উৎস সন্ধানও তিনি করেছেন, যা গ্রন্থটিকে ভিন্ন মাত্রা প্রদান করেছে। বলে আমার ধারণা। রামায়ণ-মহাভারতের সংক্ষিপ্ত কাহিনিতে বর্ণিত ছােট ছােট ব্যাখ্যাও গ্রন্থটিকে আকর্ষণীয় হতে সাহায্য করেছে। বেদ প্রাচীনতম গ্রন্থ, এরপর যথাক্রমে রামায়ণ ও মহাভারত । পুরাণসমূহের উৎপত্তি তারও পরে। বেদকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রন্থটি রচনা করায়, হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জনে এটি বিশেষ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে আমার বিশ্বাস।