১৮ বছর পর নিপা আজ বাংলাদেশে যাচ্ছে। এটাই তার প্রথম বাংলাদেশে যাওয়া। নিপার বয়স যখন ৪ বছর, নিপার বাবা হেনরি মারগান তখন নিপাকে বুকে জড়িয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে আসে। জ্ঞান হবার পর থেকেই নিপা একটি কথাই জেনেছে তার বাবা হেনরি মারগান একসময় জন্মভূমি জাপান ছেড়ে সাত বছরের চুক্তিতে বাংলাদেশের নামিদামি একটা কন্সট্রাকশন কোম্পানিতে যোগদান করেছিলেন। বাংলাদেশের প্রকৃতি, নদী-নালা, খাল-বিল, পথ-ঘাট দেখে বাবা যতটা না মুগ্ধ হয়েছিলেন তার চেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলেন মাকে দেখে। বাংলাদেশের মেয়ে এতটা সুন্দর হতে পারে তা ধারণাতেই ছিল না বাবার। তারপর ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা। আর ভালোবাসা থেকে প্রণয়। এসবই সম্ভব হয়েছিল বাবা-মায়ের একান্ত ইচ্ছেতেই। ভালোই চলছিল বাবা-মায়ের সংসার। বাবা ঠিক করেছিলেন আর কখনোই জাপানে ফিরবেন না। আমৃত্যু পর্যন্ত কাটিয়ে দিবেন বাংলাদেশের প্রকৃতির মাঝে।
কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! নিপার জন্মের পর পরই চুক্তির আগেই কন্সট্রাকশন কোম্পানি হেনরি মারগানকে চাকুরিচ্যুত করে। সংসারে আর্থিক টানাপড়েন আর মনোমালিন্যে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে বাবাকে একা ফেলে মা চলে যায়। পুরো পৃথিবীটা যেন অন্ধকার হয়ে পড়ে বাবার কাছে। নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পরবাস থেকে লাভ কী? দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেয় বাবা। ঠিক তখনই মায়ের বান্ধবী আনিতা এসে আমাকে বাবার কাছে দিয়ে যায়। সে রাতেই আমাকে নিয়ে বাবা জাপানে চলে আসে। মা দেখতে কেমন ছিল, নিপাকে কতটা আদর করতো এসব প্রশ্নের উত্তর কখনোই পায়নি নিপা। মায়ের সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে চুপচাপ বসে থাকে বাবা। নীরবে দু’ফোটা চোখের জল ফেলে।
এ জল কি মায়ের প্রতি বাবার ভালোবাসার? না কী ঘৃণার? কোন কিছুই বুঝতে পারে না নিপা। জাপানে বসবাস করলেও বাংলাদেশের কৃষ্টি কালচার, প্রকৃতি সবকিছু সম্পর্কে অবগত নিপা।
ছোটবেলা থেকেই বাংলাদেশের মানুষ পথ-ঘাট, নদী-নালা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে বাবা। শুধু তাই নয়? বাংলা ভাষায় অবিকল বাঙালিদের মতো কথা বলতে পারে নিপা। এ কারণে নিপাকে একা বাংলাদেশে পাঠাতে ভরসা পাচ্ছে হেনরি মারগান।
আজ রাত ৮টায় নিপার ফ্লাইট। টোকিও বিমানবন্দর থেকে আর কিছুক্ষণ পরেই উড়াল দিবে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। এরই মধ্যে বিমানবন্দরে ঘোষণা এল বাংলাদেশ গমনকারী যাত্রীদের ত্রিশ মিনিটের মধ্যে বিমানে অবস্থান করার জন্য। নিজের গোছানো সুটকেস বাবার হাত থেকে নিজের হাতে তুলে নিল নিপা।
বাবার মুখটা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে। মনে হয় দুশ্চিন্তার মেঘটা বাবাকে গ্রাস করেছে। দু’চোখের জলে বাবা নিপাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। বাবাকে স্বান্ত্বÍনা দেয় নিপা। কেঁদো না বাবা।
আমিতো আর চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি না। দেখো ঠিক সময়ের মধ্যে আমি তোমার কোলে এসে হাজির হবো। মনকে শক্ত করে হেনরি মারগান। নিপার কপালে চুমু দেয়। কান্না জড়িত কণ্ঠে ভাঙা ভাঙা গলায় বলে, মা! মাগো তুমিতো জান তোমাকে ছাড়া এ পৃথিবীতে আমার আর কেউ নেই। শত দুঃখের মাঝেও আমি তোমাকে আঁকড়ে বেঁচে আছি। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সত্যিই কি আমার নিপা মা আমার কাছে ফিরে আসবে? নাকি মাকে পেয়ে বাবার আদর স্নেহ সব ভুলে বাংলাদেশে রয়ে যাবে। ওহ্! বাবা। এসব নিয়ে তুমি একদম ভেবো না। সেই ছোট্টকাল থেকে দেখে আসছি কত আদর স্নেহ মমতায় আমাকে মানুষ করেছো। মায়ের অভাব কখনোই বুঝতে দাওনি। শত ঝড়-ঝঞ্ঝার মাঝেও আমাকে বুকে আগলে রেখেছো। আমার সুখের কথা ভেবে সারাটা জীবন একা কাটিয়ে দিলে। এমন বাবা ক’জনার আছে বলো? পৃথিবীর সব সুখ ছাড়তে পারবো কিন্তু তোমার আদর, স্নেহ , ভালোবাসা এসব কি করে ছাড়ি বলো বাবা? আমার তো মনে হয় আমার বাবা পৃথিবীর সেরা বাবা। এবার চোখের জল মুছে মুচকি হাসে বাবা। হয়েছে এবার চলো তোমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে হেনরি মারগান নিপাকে বিমান পর্যন্ত পৌঁছে দেয় ।
বাবা চলে যাবার পর নিপার চোখের জল মনের অজান্তেই গড়িয়ে পড়ে। বোবা কান্নায় ভেঙে পড়ে নিপা। কখনো তো বাবাকে ছেড়ে কোথাও থাকেনি নিপা। তবে এবার তিনটি মাস সে কি করে থাকবে বাবাকে ছেড়ে? রোমাল দিয়ে চোখের জল মোছে নিপা।
বিমানের গ্লাস ভেদ করে নিপার দৃষ্টি যায় বাইরে। বাবা আবার কেন বিমানের দিকে দ্রুত ছুটে আসছে? তবে কী ভুল করে কোন কিছু ফেলে এসেছি। কোন কিছু বুঝার আগেই হেনরি মারগান নিপার কাছে এসে উপস্থিত হয়।
Delivery Charge (Based on Location & Book Weight)
Inside Dhaka City: Starts from Tk. 70 (Based on book weight)
Outside Dhaka (Anywhere in Bangladesh): Starts from Tk. 150 (Weight-wise calculation applies)
International Delivery: Charges vary by country and book weight - will be informed after order confirmation.
3 Days Happy Return. Change of mind is not applicable
Multiple Payment Methods: Credit/Debit Card, bKash, Rocket, Nagad, and Cash on Delivery also available.