অপরাহ্নে বৃষ্টি

স্মৃতির ফিনফিনে রুমালে সযত্নে তুলে রাখা এই জীবনস্মৃতির অধ্যায়গুলাে। কোনােদিন আর ফিরে আসবে না। সেই হারিয়ে যাওয়া গল্প। কত কথা, হাসি-কান্না আর মনােবেদনার গল্প। যখন এই ক্ষুদ্র মফস্বল শহরটি ছিল একেবারেই ছিমছাম, পরিচ্ছন্ন, সুন্দর, সবুজ; শিক্ষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে সগৌরবে উজ্জ্বল। স্বাধীনতার পরপরই এর সৌন্দর্য, ঐশ্বর্য, ঐতিহ্য দ্রুত ঝরে পড়তে থাকে। তবুও কিছু কিছু পুরনাে ঔজ্জ্বল্য এই শহরের কোনাে কোনাে পরিবারের মধ্যে দীপ্তিময় ছিল। জজকোর্টের সিনিয়র অ্যাডভােকেট সুধীরকুমার রায়ের পরিবারটি তেমনি একটি প্রাচীন সম্রান্ত পরিবার এই শহরের ইতিহাসে।। শহরের প্রধান কেন্দ্র বলে পরিচিত রাজবাড়ি মহল্লায় যে দুটি পুরনাে যমজ একতলা বাড়ি পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তার একটিতে সুধীরবাবুর বসবাস। স্ত্রী সুমিতাদেবী, বড় মেয়ে বীথিকা ওরফে বীথি, ছেলে সুভদ্র, ছােট মেয়ে সাথী এবং কাজের ছেলে সজলকে নিয়ে তার সংসার। এই বাড়িতে আরও একজন সদস্য আছে যে সুমিতাদেবীর দূরসম্পকীয় এক আত্মীয়ের ছেলে, শংকর। শংকরলাল মজুমদার। স্থানীয় ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের অনার্সের ছাত্র। শ্যামল শংকরেরই সমবয়সী বন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। অনেকদিন পর কোনাে খবর না দিয়েই হঠাৎ করে সে এসে হাজির হল এক দুপুরে। ওরা দুজন দুই মরুভূমির মানুষ। শ্যামল ইতিহাস আর শংকর রাজনীতি। সর্বক্ষণ মার্ক্স-লেনিন-অ্যাঙ্গেলসএমএন রায়-শিবনারায়ণ-সুশােভন-টয়েনবি-ফ্রান্সিস ফুকুইয়ামা-বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথগান্ধী-নেহরু-নেতাজি-হিটলার-তােজো-স্ট্যালিন প্রমুখকে নিয়ে এদের তর্কাতর্কি। হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে অনেকবার। আবার খাবার টেবিলে মিলেমিশে গেছে। দুজনেই হাে হাে করে খুব হাসতে পারে, তবে হাসাতে পারে শ্যামল। শ্যামল খােলামেলা, শংকর অনেকটা চাপা। বিচিত্র হাসির গল্প যেমন জানে শ্যামল তেমনি জানে ইতিহাসের গল্প। তার গল্প শুনে বুদ না হয়ে উপায় নেই। সুধীরবাবু তাে দারুণ ভক্ত তার। কয়েকটি দিন দারুণ হাসিখুশি আনন্দে কেটে গেল। সুধীরবাবু বললেন, শ্যামল, তােমার ব্যস্ততা না থাকলে আরও দুটো দিন থেকে যাও বাবা। পুজোটাও দেখে গেলে। অপরাহ্বে বৃষ্টি