Skip to Content
বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী : খণ্ড ৫

Price:

800.00 ৳


Atomic Habits by James Clear
Atomic Habits by James Clear
1,798.00 ৳
1,798.00 ৳
Sapiens : A Brief History of Humankind (HB)
Sapiens : A Brief History of Humankind (HB)
2,600.00 ৳
2,600.00 ৳

বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী : খণ্ড ৫

https://pathakshamabesh.com/web/image/product.template/2614/image_1920?unique=e1b7c8d

800.00 ৳ 800.0 BDT 800.00 ৳

Not Available For Sale


This combination does not exist.

Terms and Conditions
30-day money-back guarantee
Shipping: 2-3 Business Days

 Delivery Charge (Based on Location & Book Weight)

 Inside Dhaka City: Starts from Tk. 70 (Based on book weight)

 Outside Dhaka (Anywhere in Bangladesh): Starts from Tk. 150 (Weight-wise calculation applies)

 International Delivery: Charges vary by country and book weight — will be informed after order confirmation.

 3 Days Happy ReturnChange of mind is not applicable

 Multiple Payment Methods

Credit/Debit Card, bKash, Rocket, Nagad, and Cash on Delivery also available. 

পাকিস্তান সরকারের চাপের মুখে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে রাজনীতিতে যোগদানের লক্ষে বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় ইস্তফা দেন এবং ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে (মার্কবাদী-লেনিনবাদী) যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে পার্টি কর্তৃক একটি প্রকাশ্য সাপ্তাহিক প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত। ভাসানী এই পত্রিকার নাম দেন গণশক্তি। ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ কমিউনিস্ট পার্টির অকৃত্রিম সুহৃদ কমরেড সায়ীদুল হাসান পত্রিকাটির মুদ্রক, প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকার সাথে তাঁর সক্রিয় সম্পর্ক ছিল না। পত্রিকা পরিচালনার জন্য পার্টি কর্তৃক তিন সদস্য বিশিষ্ট সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছিল যাঁরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার কমরেড মোহাম্মদ মোর্তজা, কমরেড কাসেদ আলী এবং কমরেড বদরুদ্দীন উমর। সম্পাদক মণ্ডলীর মধ্যে প্রথমোক্ত দুজন গণশক্তি অফিসে আসতেন না। উমর ‘ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার যাবতীয় কাজ তাঁকে করতে হতো। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত সাড়ে তেরো মাসে সাপ্তাহিক গণশক্তি পত্রিকাটির ৫৯টি সংখ্যা বিরতিহীনভাবে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় সম্পাদকীয়, ঘটনা প্রবাহ, গ্রন্থ আলোচনা এবং অন্যান্য রচনার প্রায় অর্ধেক উমরকে লিখতে হতো যেগুলির অধিকাংশ যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ (১৯৭৬) গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এই পত্রিকার লক্ষ্য সম্পর্কে সুখেন্দু দস্তিদার লিখেছেন, ‘আমাদের সংগ্রাম হবে আমাদের দেশকে প্রথমে সাম্রাজ্যবাদী-সামন্তবাদী ও বড় ধনিকের শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য এবং অবশেষে সকল প্রকার শোষণ থেকে জনগণের মুক্তির জন্য।’ গণশক্তিতে উমর এবং কমরেডদের একটি অবদান হলো নকশাল বাড়ী সাংস্কৃতিক চিন্তাকে প্রতিহত করা। ষাটের দশকের শেষভাগে দেশব্রতী পত্রিকার মাধ্যমে সরোজ দত্ত ও চারু মজুমদার প্রমুখ প্রবর্তিত ‘নৈরাজ্যবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদী’ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে নকশালবাড়ীর নেতারা বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রমুখের অবমূল্যায়ন করেন, তাঁদের মূর্তি ভাঙেন। উমর লিখেছেন, ‘গণশক্তিকে আমরা সেই ধরনের কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মুখপত্র হতে দিইনি। কিন্তু শুধু সে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির শক্তিবৃদ্ধির আশংকাতেই আমরা তা করিনি, তাই নয়। আমরা পশ্চিম বাঙলার সেই তথাকথিত বিপ্লবী সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে মার্কসবিরোধী, জনগণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচীর পরিপন্থী, সন্ত্রাসবাদী এবং সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলেই বিবেচনা করেছিলাম।’ (‘প্রথম প্রকাশের মুখবন্ধ’ : ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ঊনিশ শতকের বাঙালী সমাজ : বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী : খণ্ড ৩ : পৃ ২৭৮) পশ্চিম বাঙলার উক্ত নকশাল বাড়ী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভিঘাতকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবার এই কাজটি ছিল গণশক্তি ও বদরুদ্দীন উমরের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক ও সফল দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত। কিন্তু তাঁদের ব্যর্থতার দিকও ছিল। নকশালবাড়ীর সাংস্কৃতিক অভিঘাতকে প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও তার রাজনৈতিক অভিঘাতকে তাঁরা অতিক্রম করতে পারেননি। ফলে নকশালবাড়ী আন্দোলনের ঢেউয়ে প্লাবিত হয়ে এ সময় পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি গণসংগঠন পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের মে মাসে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক পদ (গণশক্তি ৩১.৫.১৯৭০) এবং জুন মাসে আবদুল হক কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ (গণশক্তি ২৮.৬.১৯৭০) ত্যাগ করেন। তাঁরা ন্যাপ, শ্রমিক ফেডারেশন, কৃষক সমিতি ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিত্যাগ করেন এবং সেই সাথে খতমের লাইন অবলম্বন করেন। এবিষয়ে উমর লিখেছেন, “গণসংগঠন ও শ্রেণী সংগঠনগুলিকে বর্জন করে পার্টিকেই বিপ্লবের একমাত্র সাংগঠনিক হাতিয়ার মনে করা; শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের সংগঠনগুলি ভেঙে দেওয়া অথবা তার থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে (ভাসানী গ্রুপ) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য করা, জোতদার মহাজন খতমকে বিপ্লবী প্রচার ও সংগঠনের চাবিকাঠি মনে করা ইত্যাদি ছিলো চারু মজুমদারের রাজনৈতিক লাইনের চরম ভ্রান্তি। এই ভুল আমি নিজেও করেছিলাম এবং পার্টির পক্ষ থেকে সেগুলি আমার সম্পাদনায় গণশক্তিতে প্রচারিত হয়েছিলো। এই ভুলগুলি আমি ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর থেকেই উপলব্ধি করতে থাকি এবং পূর্ব মতামতের পুনর্মূল্যায়ন ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক মতামতকে নোতুনভাবে সংগঠিত করতে নিযুক্ত হই।” (‘মুখবন্ধ’:উর:৫:১৬) গণশক্তি পত্রিকায় সে সময়ের আওয়ামী লীগ, ন্যাপ এবং অন্যান্য পার্টির মূল্যায়ন করা হয়েছে। মওলানা ভাসানী ও ন্যাপের ভূমিকা বিষয়ে অনেকগুলি রচনা প্রকাশ করা হয়েছে। উমরও কয়েকটি লিখেছেন। ইসলামী প্রসঙ্গ উত্থাপন, সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামী শব্দ জুড়ে দেয়া, পশ্চিম পাকিস্তানে টোবাটেক সিং এর সম্মেলনে যাবার সময় বিমানবন্দরে বামপন্থী নেতাকে ‘হিন্দু’ অভিহিত করে সাম্প্রদায়িকতার মদদ দান, প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ, চীন বিরোধী বক্তব্য দেয়া (হককুল ইবাদ মিশনের বুলেটিনে) প্রভৃতির মাধ্যমে মওলানার ‘দায়িত্বহীনতা’ এবং ‘সংস্কারবাদী’ চিন্তাধারা ফুটে উঠেছে মর্মে পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়। উমর উল্লেখ করেছেন ১৬/১৭ বছর গণ-আন্দোলনে ভাসানীর প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল। তিনি সুহরাওয়ার্দী-মুজিবের মতো একজন গণনেতা। তবে তিনি তাঁদের থেকে পৃথক ছিলেন। এই গণনেতা হিসেবে ভাসানীর ‘বর্তমান পর্যায়ে উপনীত’ হবার পেছনে বামপন্থীদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। একদিকে কমিউনিস্টরা গণসংগঠনে অধিক সময় ব্যয় করে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করার সময় পাননি, অন্যদিকে মওলানার বা গণসংগঠনের সাথে বিচ্ছেদ কমিউনিস্টদের জন্য শক্তি হানিকর হবে − উমর একথা লিখেছেন। পত্রিকায় মোহাম্মদ তোয়াহা লিখেছেন, আওয়ামী লীগ পূর্ব বাঙলার উদীয়মান মুৎসুদ্দী বুর্জোয়ার স্বার্থবাহী সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল দল। তাঁরা ১৯৫৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ওয়াদা খেলাপ করে জাতিগত স্বাধিকারের ধারণা ত্যাগ করেন, এক ইউনিট এবং সংখ্যা সাম্যের নীতির পক্ষে কাজ করেন। সুহরাওয়ার্দীর শূন্যতত্ত্ব সেটাই − পাকিস্তান শূন্যশক্তি, মধ্যপ্রাচ্য শূন্যশক্তি কিন্তু আমেরিকা পূর্ণশক্তি। এই নীতির বিরোধী বাঙালী উদারনীতিক জাতীয় বুর্জোয়াদের পার্টি হলো ন্যাপ, ন্যাপই রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শভিত্তিক দল। আর সেখানে রয়েছেন ‘বিভ্রান্ত বামপন্থীগণ’, যাঁরা সংস্কারবাদী। তাঁরা গণচেতনা ও সঠিক রাজনৈতিক লাইনের অভাবে জাতীয় বুর্জোয়াদের লেজুড়ে পরিণত হয়েছেন। তবে তাঁরা মনে করেন বাঙালী, পাঞ্জাবী, সিন্ধী, বালুচ, পাঠানের জাতিগত স্বাধিকার অর্জনের মাধ্যমে সামন্তবাদ, মুৎসুদ্দী আমলা পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তি প্রয়োজন। সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাঁধা (গণশক্তি ১৫.২.১৯৭০)। পূর্ব বাঙলার মুক্তি সম্ভব জনগণতন্ত্রের মাধ্যমে। তোয়াহা আরও লিখেছেন, ৬ দফা পূর্ব বাংলার ‘মুক্তির সনদ’ নয়। তাতে কৃষক শ্রমিকের মুক্তির প্রসঙ্গ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এজেন্ডা নেই। এই কারণে তাদের শোষণ মুক্তির কথা হলো ধাপ্পাবাজী। অন্যদিকে ১১ দফায় অপূর্ণতা সত্ত্বেও অনেক প্রয়োজনীয় দাবী ছিল। তাই শ্রমিক ও ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন জোরদার করেন। শেখ মুজিব যখন ঘোষণা করেন ৬ দফায় ১১ দফা রয়েছে তখন ছেলেরা এই ছড়া কাটে - ‘বঙ্গবন্ধুর রঙ্গ দেখ বঙ্গ/১১ দফা হইল নাকি/৬ দফারই অঙ্গ।’ উমর লিখেছেন, ৬ দফার মাধ্যমে জাতিগত নিপীড়ন এবং শ্রেণীশোষণ অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বিধায় পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত ও বুর্জোয়াদের কিছু নেতা ৬ দফাকে সমর্থন করেছেন, শেখ মুজিবও ৬ দফার প্রশ্নে আপোসহীন একই কারণে। উমর গণশক্তির এক বৎসরের সম্পাদকীয়তে (০৭.০২.১৯৭১) লিখেছেন, এই বছরেই (১৯৭০) ‘পূর্ব বাঙলায় নানান হতবুদ্ধিতা ও বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনীতি তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’ এ সময়ে তারা ‘কৃষিবিপ্লবের রাজনীতিকে একটা নির্দিষ্ট খাতে এবং উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।’ উমর আরও লিখেছেন, ‘গণশক্তি শ্রমিকশ্রেণীর সাপ্তাহিক পত্রিকা, পূর্ব বাঙলার কৃষিবিপ্লবের মুখপত্র’। ৫৯ সপ্তাহের গণশক্তি সে সময়ের কমিউনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক অবস্থার অনেক লেখচিত্র ধারণ করে আছে, তাই গণশক্তি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভাষ্যের খনিবিশেষ। বদরুদ্দীন উমর রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে (খণ্ড ৫-এ) যুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশ (১৯৭৬খ) শীর্ষক গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেসব ভাষ্যের অংশবিশেষ পাঠক-গবেষকমহলে সহজপ্রাপ্য হলো। খণ্ড ৫-এ সংকলিত দ্বিতীয় গ্রন্থটি হলো ওসঢ়বৎরধষরংস ধহফ এবহবৎধষ ঈৎরংরং ড়ভ ঃযব ইড়ঁৎমবড়রংরব রহ ইধহমষধফবংয (১৯৭৯) – যা ১৯৭৬ সালের শেষভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাপ্তাহিক হলিডে, সাপ্তাহিক সাটারডে পোস্ট এবং সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার সংকলন। এতে যে বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, সে সময়ে দেশের বুর্জোয়াজির সমস্যা এবং তার কিছু দৃষ্টান্ত। পঞ্চম খণ্ডে সংকলিত তৃতীয় গ্রন্থটির নাম ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮০ক)। এ গ্রন্থে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত কিছু প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে।

Title

বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী : খণ্ড ৫

Publisher

Bangala Gobeshana

Number of Pages

431

Language

Bengali / বাংলা

Category

  • Essays
  • First Published

    DEC 2022

    পাকিস্তান সরকারের চাপের মুখে এবং পূর্ণাঙ্গভাবে রাজনীতিতে যোগদানের লক্ষে বদরুদ্দীন উমর ১৯৬৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনায় ইস্তফা দেন এবং ১৯৬৯ সালের এপ্রিল মাসে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে (মার্কবাদী-লেনিনবাদী) যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালের শেষ দিকে পার্টি কর্তৃক একটি প্রকাশ্য সাপ্তাহিক প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত। ভাসানী এই পত্রিকার নাম দেন গণশক্তি। ন্যাপের কোষাধ্যক্ষ কমিউনিস্ট পার্টির অকৃত্রিম সুহৃদ কমরেড সায়ীদুল হাসান পত্রিকাটির মুদ্রক, প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকার সাথে তাঁর সক্রিয় সম্পর্ক ছিল না। পত্রিকা পরিচালনার জন্য পার্টি কর্তৃক তিন সদস্য বিশিষ্ট সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছিল যাঁরা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ডাক্তার কমরেড মোহাম্মদ মোর্তজা, কমরেড কাসেদ আলী এবং কমরেড বদরুদ্দীন উমর। সম্পাদক মণ্ডলীর মধ্যে প্রথমোক্ত দুজন গণশক্তি অফিসে আসতেন না। উমর ‘ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক’ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। পত্রিকা সম্পাদনার যাবতীয় কাজ তাঁকে করতে হতো। ১৯৭০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৯৭১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত সাড়ে তেরো মাসে সাপ্তাহিক গণশক্তি পত্রিকাটির ৫৯টি সংখ্যা বিরতিহীনভাবে নিয়মিত প্রকাশিত হয়। এই পত্রিকায় সম্পাদকীয়, ঘটনা প্রবাহ, গ্রন্থ আলোচনা এবং অন্যান্য রচনার প্রায় অর্ধেক উমরকে লিখতে হতো যেগুলির অধিকাংশ যুদ্ধপূর্ব বাঙলাদেশ (১৯৭৬) গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এই পত্রিকার লক্ষ্য সম্পর্কে সুখেন্দু দস্তিদার লিখেছেন, ‘আমাদের সংগ্রাম হবে আমাদের দেশকে প্রথমে সাম্রাজ্যবাদী-সামন্তবাদী ও বড় ধনিকের শোষণ থেকে মুক্ত করার জন্য এবং অবশেষে সকল প্রকার শোষণ থেকে জনগণের মুক্তির জন্য।’ গণশক্তিতে উমর এবং কমরেডদের একটি অবদান হলো নকশাল বাড়ী সাংস্কৃতিক চিন্তাকে প্রতিহত করা। ষাটের দশকের শেষভাগে দেশব্রতী পত্রিকার মাধ্যমে সরোজ দত্ত ও চারু মজুমদার প্রমুখ প্রবর্তিত ‘নৈরাজ্যবাদী’ ও ‘সন্ত্রাসবাদী’ সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে নকশালবাড়ীর নেতারা বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রমুখের অবমূল্যায়ন করেন, তাঁদের মূর্তি ভাঙেন। উমর লিখেছেন, ‘গণশক্তিকে আমরা সেই ধরনের কোনো সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মুখপত্র হতে দিইনি। কিন্তু শুধু সে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির শক্তিবৃদ্ধির আশংকাতেই আমরা তা করিনি, তাই নয়। আমরা পশ্চিম বাঙলার সেই তথাকথিত বিপ্লবী সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে মার্কসবিরোধী, জনগণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক কর্মসূচীর পরিপন্থী, সন্ত্রাসবাদী এবং সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বলেই বিবেচনা করেছিলাম।’ (‘প্রথম প্রকাশের মুখবন্ধ’ : ঈশ^রচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও ঊনিশ শতকের বাঙালী সমাজ : বদরুদ্দীন উমর রচনাবলী : খণ্ড ৩ : পৃ ২৭৮) পশ্চিম বাঙলার উক্ত নকশাল বাড়ী সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অভিঘাতকে প্রতিহত করতে সক্ষম হবার এই কাজটি ছিল গণশক্তি ও বদরুদ্দীন উমরের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক ও সফল দায়িত্ব পালনের দৃষ্টান্ত। কিন্তু তাঁদের ব্যর্থতার দিকও ছিল। নকশালবাড়ীর সাংস্কৃতিক অভিঘাতকে প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও তার রাজনৈতিক অভিঘাতকে তাঁরা অতিক্রম করতে পারেননি। ফলে নকশালবাড়ী আন্দোলনের ঢেউয়ে প্লাবিত হয়ে এ সময় পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি গণসংগঠন পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের মে মাসে কমরেড মোহাম্মদ তোয়াহা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক পদ (গণশক্তি ৩১.৫.১৯৭০) এবং জুন মাসে আবদুল হক কৃষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদ (গণশক্তি ২৮.৬.১৯৭০) ত্যাগ করেন। তাঁরা ন্যাপ, শ্রমিক ফেডারেশন, কৃষক সমিতি ও ছাত্র ইউনিয়ন পরিত্যাগ করেন এবং সেই সাথে খতমের লাইন অবলম্বন করেন। এবিষয়ে উমর লিখেছেন, “গণসংগঠন ও শ্রেণী সংগঠনগুলিকে বর্জন করে পার্টিকেই বিপ্লবের একমাত্র সাংগঠনিক হাতিয়ার মনে করা; শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের সংগঠনগুলি ভেঙে দেওয়া অথবা তার থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেওয়া, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টিকে (ভাসানী গ্রুপ) ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য করা, জোতদার মহাজন খতমকে বিপ্লবী প্রচার ও সংগঠনের চাবিকাঠি মনে করা ইত্যাদি ছিলো চারু মজুমদারের রাজনৈতিক লাইনের চরম ভ্রান্তি। এই ভুল আমি নিজেও করেছিলাম এবং পার্টির পক্ষ থেকে সেগুলি আমার সম্পাদনায় গণশক্তিতে প্রচারিত হয়েছিলো। এই ভুলগুলি আমি ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর থেকেই উপলব্ধি করতে থাকি এবং পূর্ব মতামতের পুনর্মূল্যায়ন ও আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক মতামতকে নোতুনভাবে সংগঠিত করতে নিযুক্ত হই।” (‘মুখবন্ধ’:উর:৫:১৬) গণশক্তি পত্রিকায় সে সময়ের আওয়ামী লীগ, ন্যাপ এবং অন্যান্য পার্টির মূল্যায়ন করা হয়েছে। মওলানা ভাসানী ও ন্যাপের ভূমিকা বিষয়ে অনেকগুলি রচনা প্রকাশ করা হয়েছে। উমরও কয়েকটি লিখেছেন। ইসলামী প্রসঙ্গ উত্থাপন, সমাজতন্ত্রের সাথে ইসলামী শব্দ জুড়ে দেয়া, পশ্চিম পাকিস্তানে টোবাটেক সিং এর সম্মেলনে যাবার সময় বিমানবন্দরে বামপন্থী নেতাকে ‘হিন্দু’ অভিহিত করে সাম্প্রদায়িকতার মদদ দান, প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাৎ, চীন বিরোধী বক্তব্য দেয়া (হককুল ইবাদ মিশনের বুলেটিনে) প্রভৃতির মাধ্যমে মওলানার ‘দায়িত্বহীনতা’ এবং ‘সংস্কারবাদী’ চিন্তাধারা ফুটে উঠেছে মর্মে পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়। উমর উল্লেখ করেছেন ১৬/১৭ বছর গণ-আন্দোলনে ভাসানীর প্রগতিশীল ভূমিকা ছিল। তিনি সুহরাওয়ার্দী-মুজিবের মতো একজন গণনেতা। তবে তিনি তাঁদের থেকে পৃথক ছিলেন। এই গণনেতা হিসেবে ভাসানীর ‘বর্তমান পর্যায়ে উপনীত’ হবার পেছনে বামপন্থীদের সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। একদিকে কমিউনিস্টরা গণসংগঠনে অধিক সময় ব্যয় করে নিজেদের সংগঠন শক্তিশালী করার সময় পাননি, অন্যদিকে মওলানার বা গণসংগঠনের সাথে বিচ্ছেদ কমিউনিস্টদের জন্য শক্তি হানিকর হবে − উমর একথা লিখেছেন। পত্রিকায় মোহাম্মদ তোয়াহা লিখেছেন, আওয়ামী লীগ পূর্ব বাঙলার উদীয়মান মুৎসুদ্দী বুর্জোয়ার স্বার্থবাহী সাম্রাজ্যবাদের উপর নির্ভরশীল দল। তাঁরা ১৯৫৬ সালে ক্ষমতায় গিয়ে ওয়াদা খেলাপ করে জাতিগত স্বাধিকারের ধারণা ত্যাগ করেন, এক ইউনিট এবং সংখ্যা সাম্যের নীতির পক্ষে কাজ করেন। সুহরাওয়ার্দীর শূন্যতত্ত্ব সেটাই − পাকিস্তান শূন্যশক্তি, মধ্যপ্রাচ্য শূন্যশক্তি কিন্তু আমেরিকা পূর্ণশক্তি। এই নীতির বিরোধী বাঙালী উদারনীতিক জাতীয় বুর্জোয়াদের পার্টি হলো ন্যাপ, ন্যাপই রাজনীতিতে জাতীয়তাবাদী ভাবাদর্শভিত্তিক দল। আর সেখানে রয়েছেন ‘বিভ্রান্ত বামপন্থীগণ’, যাঁরা সংস্কারবাদী। তাঁরা গণচেতনা ও সঠিক রাজনৈতিক লাইনের অভাবে জাতীয় বুর্জোয়াদের লেজুড়ে পরিণত হয়েছেন। তবে তাঁরা মনে করেন বাঙালী, পাঞ্জাবী, সিন্ধী, বালুচ, পাঠানের জাতিগত স্বাধিকার অর্জনের মাধ্যমে সামন্তবাদ, মুৎসুদ্দী আমলা পুঁজি ও সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তি প্রয়োজন। সাম্রাজ্যবাদ পাকিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাঁধা (গণশক্তি ১৫.২.১৯৭০)। পূর্ব বাঙলার মুক্তি সম্ভব জনগণতন্ত্রের মাধ্যমে। তোয়াহা আরও লিখেছেন, ৬ দফা পূর্ব বাংলার ‘মুক্তির সনদ’ নয়। তাতে কৃষক শ্রমিকের মুক্তির প্রসঙ্গ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী এজেন্ডা নেই। এই কারণে তাদের শোষণ মুক্তির কথা হলো ধাপ্পাবাজী। অন্যদিকে ১১ দফায় অপূর্ণতা সত্ত্বেও অনেক প্রয়োজনীয় দাবী ছিল। তাই শ্রমিক ও ছাত্ররা ১১ দফা আন্দোলন জোরদার করেন। শেখ মুজিব যখন ঘোষণা করেন ৬ দফায় ১১ দফা রয়েছে তখন ছেলেরা এই ছড়া কাটে - ‘বঙ্গবন্ধুর রঙ্গ দেখ বঙ্গ/১১ দফা হইল নাকি/৬ দফারই অঙ্গ।’ উমর লিখেছেন, ৬ দফার মাধ্যমে জাতিগত নিপীড়ন এবং শ্রেণীশোষণ অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে বিধায় পশ্চিম পাকিস্তানের সামন্ত ও বুর্জোয়াদের কিছু নেতা ৬ দফাকে সমর্থন করেছেন, শেখ মুজিবও ৬ দফার প্রশ্নে আপোসহীন একই কারণে। উমর গণশক্তির এক বৎসরের সম্পাদকীয়তে (০৭.০২.১৯৭১) লিখেছেন, এই বছরেই (১৯৭০) ‘পূর্ব বাঙলায় নানান হতবুদ্ধিতা ও বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করে মার্কসবাদী-লেনিনবাদী রাজনীতি তার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।’ এ সময়ে তারা ‘কৃষিবিপ্লবের রাজনীতিকে একটা নির্দিষ্ট খাতে এবং উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন।’ উমর আরও লিখেছেন, ‘গণশক্তি শ্রমিকশ্রেণীর সাপ্তাহিক পত্রিকা, পূর্ব বাঙলার কৃষিবিপ্লবের মুখপত্র’। ৫৯ সপ্তাহের গণশক্তি সে সময়ের কমিউনিস্ট দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক অবস্থার অনেক লেখচিত্র ধারণ করে আছে, তাই গণশক্তি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভাষ্যের খনিবিশেষ। বদরুদ্দীন উমর রচনাবলীর বর্তমান খণ্ডে (খণ্ড ৫-এ) যুদ্ধপূর্ব বাংলাদেশ (১৯৭৬খ) শীর্ষক গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় সেসব ভাষ্যের অংশবিশেষ পাঠক-গবেষকমহলে সহজপ্রাপ্য হলো। খণ্ড ৫-এ সংকলিত দ্বিতীয় গ্রন্থটি হলো ওসঢ়বৎরধষরংস ধহফ এবহবৎধষ ঈৎরংরং ড়ভ ঃযব ইড়ঁৎমবড়রংরব রহ ইধহমষধফবংয (১৯৭৯) – যা ১৯৭৬ সালের শেষভাগ থেকে শুরু করে ১৯৭৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাপ্তাহিক হলিডে, সাপ্তাহিক সাটারডে পোস্ট এবং সাপ্তাহিক ফ্রন্টিয়ার পত্রিকায় প্রকাশিত রচনার সংকলন। এতে যে বিষয়গুলি আলোচিত হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে সাম্রাজ্যবাদ, সে সময়ে দেশের বুর্জোয়াজির সমস্যা এবং তার কিছু দৃষ্টান্ত। পঞ্চম খণ্ডে সংকলিত তৃতীয় গ্রন্থটির নাম ভাষা আন্দোলন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (১৯৮০ক)। এ গ্রন্থে ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত কিছু প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে।
    No Specifications