রাষ্ট্রভাবনার কয়েকটি প্রসঙ্গ

বাংলাদেশের বিদ্বৎসমাজে রাজনীতি ভাবনা যতটা বেশি রাষ্ট্রভাবনা ততটাই কম। বেশিরভাগেরই ধারণা রাষ্ট্রভাবনা স্রেফ শাসনকার্য ও ক্ষমতার হাত বদলের দরকারে কী করণীয় বা অকরণীয় তা ভাবনার বিষয় । সমাজবিজ্ঞানী হেলাল মহিউদ্দীন দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রভাবনা আর সমাজভাবনা একই মুদ্রার দুই পিঠ। এই সমাজচিন্তন পদ্ধতির অভাবে রাষ্ট্রভাবনা নানারকম গলদের ফাঁদে আটকা পড়ছে। অধ্যাপক হেলাল মহিউদ্দীন অন্তত পাঁচটি বড় গলদ চিহ্নিত করেছেন। গলদগুলো কাটিয়ে উঠতে কার্যকর রাষ্ট্রভাবনার কিছু সূত্রও প্রস্তাব করেছেন । তিনি খেয়াল করেছেন রাষ্ট্রভাবনায় জাতিসত্তার প্রসঙ্গটিও গোলমেলে জট পাকিয়ে আছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করার ক্ষেত্রে কোন কোন বিভ্রান্তি বাধা হয়ে দাঁড়ায়-হেলাল মহিউদ্দীন তার সুলুকসন্ধান করেছেন । তিনি আরও দেখিয়েছেন, চলমান পুঁজিবাদ বিশ্লেষণের বেলায় প্রিকারিয়েত একটি অনিবার্য বর্গ হয়ে উঠেছে। প্রলেতারিয়েতের জায়গা নিয়েছে প্রিকারিয়েত। বদলে যাচ্ছে নাজুক ও সদা অস্থির মধ্যবিত্ত শ্রেণিও। দোদুল্যমান মানসিকতা রোগে আক্রান্ত, বিভ্রান্ত এবং সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধাগ্রস্ত একই সঙ্গে দ্বৈত ভাবনায় আটকে পড়া বর্গটি তাঁর দৃষ্টিতে ‘মধ্যদ্বিত্ব’। উপস্থাপন করেছেন 'মধ্যদ্বিত্ব’ ধারণাটি উদ্ভাবনের কার্যকারণ। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। উপস্থাপন করেছেন জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের চুক্তিনামার আলোকে অধিকার, সামাজিক সমতা, ন্যায়বিচার, জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা, জনঅংশগ্রহণ, ভোটের মাধ্যমে শোষকের পুনর্বাসনজনিত সংকটের জটিল প্রসঙ্গগুলোও। পরিবর্তনকামী রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান ও অর্থনীতিশাস্ত্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ যেকোনো চিন্তাশীল পাঠকের জন্য বিপুল চিন্তার খোরাক নিয়ে অপেক্ষা করছে এই বই।