নবাব সিরাজউদ্দৌলা (দ্য স্কাই)

এক যুগের ইতিহাসের কাছ থেকে পরবর্তী যুগ নানা জ্ঞানের পাঠ গ্রহণ করে। এই পাঠ গ্রহণ সার্থক হয় না ইতিহাস অখন্ড সত্য নির্ভর না হলে । কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে এক একটি জাতি যুগের সীমানা অতিক্রম করে নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা এবং প্রভাব অক্ষুন্ন রাখবার জন্যে ইতিহাসকে খুশিমত নির্মাণ করে গেছে; অথবা তাদের স্বার্থানুযায়ী ইতিহাস নির্মিত হওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করেছে। ফলে অসংখ্য অসত্যের স্তুপে সত্যের হয়েছে সমাধি। নূতন নূতন কণ্ঠে অসত্য নূতন নূতন সুরে ঝংকৃত হয়েছে। জমে উঠেছে বিভ্রান্তির পাহাড়। ইতিহাস নির্মাণের এই কৌশলে ইংরেজদের দক্ষতা বিস্ময়কর। দূরদর্শিতা, অভীষ্ঠ সিদ্ধির জন্যে সজাগ তৎপরতা, ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টা, নির্লজ্জ চাতুরী প্রভৃতির সমন্বয়ে তারা তাদের স্বার্থানুযায়ী ইতিহাস অনেকের দ্বারা লিখিয়েছে। (শক্তি প্রয়ােগের নয়-তাদের কৌশল সৃষ্ট পরিবেশের বিভ্রান্তি উদ্বুদ্ধ করে) এবং জনসাধারণকে তা যথাসম্ভব বিশ্বাস ও কব্রিয়েছে। আমাদের ইতিহাসে। সিরাজ-উ-দ্দৌলার নামটি কলঙ্ক এবং নৃশংসতার সঙ্গে সমার্থবােধর্ক করে তােলা ইংরেজের অন্যতম উল্লেখযােগ্য কীর্তি। শাঠ্যকে শৌর্য, হঠকারিতাকে বীরত্বের মর্যাদায় ভূষিত করেছি আমরা বছরের পর বছর। ক্লাইভের মত ন্যায়নীতি বর্জিত হৃদয়হীন দস্যুর কণ্ঠে বীরের জয়মাল্য দিতে আমরা কুন্টিত হইনি। সিরাজউদ্দৌলাকে শুধু যে বর্বরতার দুর্লভ দৃষ্টান্ত হিসেবেই খাড়া করেছি তা নয়, তাকে ধিকৃত করেছি চরম কাপুরুষতার গ্লানিতে। নবীন সেনের মত প্রতিভাধর দেশ প্রেমিক কবিও মুখর হয়েছেন সিরাজের কলঙ্ক কীর্তনে। যদিও সিরাজ হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন “নিৰিল তখন ভারতের স্বাধীনতার সর্বশেষ প্রদীপ সে বিষয়ে কবি সচেতন ছিলেন। তবু ব্যক্তি হিসেবে সিরাজউদ্দৌলার কাঞ্চ কীর্তনের লােভ তিনি সংবরণ করতে পারেন নি। কারণ, অপরের কুৎসায় মানুষের আনন্দ অপরিতৃপ্ত । সে কুৎসা কলঙ্কের ভিয়েনে পরিপক্ক হলে ত কথাই নেই। এক কান থেকে আর এক কান এবং তারপর তৃতীয় চতুর্থ কানে যেতে যেতে প্রথম প্রচারিত কুৎসা শাখা প্রশাখা ছড়িয়ে মহীরূহ হয়ে ওঠে