বাংলা সাহিত্যে ধান

বাংলার ধান বৈচিত্র্য বিজ্ঞানের এক অপার বিস্ময়। আমাদের জানামতে, পৃথিবীতে ধানের প্রজাতি রয়েছে। লক্ষাধিক। এর গঠন এবং গুণাগুণের মধ্যে রয়েছে। পৃথক বৈশিষ্ট্য। এই বিপুল বৈচিত্র্যময় ফসল পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই । ধান ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বসবাসরত মানুষের প্রধান খাদ্যশস্য গম, যব, ভুট্টা এবং আলু। এদেশের কৃষকের দ্বারা উদ্ভাবিত দেশজ হাজার হাজার জাতের ধানের নামকরণ করেছেন। আমাদেরই পূর্বপুরুষেরা, যারা ছিলেন স্বশিক্ষিত চাষি, উদ্ভাবক এবং বিজ্ঞানী। ধানের নাম এবং গুণাগুণ মঙ্গলকাব্যের কবি এবং প্রাচীন পুথি সাহিত্যিকদের চিন্তার জগৎকে আলােড়িত করেছিল । মহাকবি আলাওলের পদ্মাবতী কাব্যের একটি বড় অংশজুড়ে উল্লেখ দেখা যায় মধ্যযুগে বাংলায় চাষকৃত রাজভােগ, কাজলরাণী, দাদখানি, বাসমতি, লবঙ্গচুর, মধুকর, রামরাস-এ-জাতীয় অতি মনােহর সুগন্ধ ও স্বাদযুক্ত চালের । মৌমাছিরা পর্যন্ত যে-চালের সুগন্ধে আকৃষ্ট হয়ে ফুলের বন ছেড়ে রাধুনির কাছে ভিড় জমাত। এমনিভাবে মঙ্গলকাব্যের কবি ভারতচন্দ্র রায়গুনাকর, শ্রীকৃষ্ণ কিঙ্কর, রামেশ্বর, রামাই পণ্ডিত, কৃষ্ণরাম দাস ধানকে কেন্দ্র করে রচনা করলেন অসাধারণ কয়েকটি কাব্য, যেগুলাে এখনাে বাঙালি সমাজে সমাদৃত। পরবর্তী কালে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ, সুকান্ত, জসীমউদ্দীন, আল মাহমুদ, রফিক আজাদ-এদের। কলমে উঠে এলাে ধানবিষয়ক অসাধারণ কাব্য ও গীতিমালা। বর্তমান প্রজন্মের কবি, গীতিকারা এই পরম্পরা অব্যাহত রেখেছেন। স্বপ্নের ফসল ধান বাঙালির চেতনায় চিরভাস্বর হয়ে আছে, থাকবে ।