মানুষ রতন

দেশের বরেণ্য শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক ড. রাশেদ-আল হাসানের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জীবনের শেষ দিনগুলাের ছাত্র অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। করােনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না, এই বিতর্কের অবসান হয় না ড. রাশেদের আকস্মিক মৃত্যুতে। দুই প্রজন্মের দুজন মানুষের বয়সের ব্যবধান অন্তত চার দশক। এ উপন্যাসে রয়েছে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের প্রাতিস্বিক বয়ান, যা এর আগে বাংলা উপন্যাসে বিধৃত হয়নি। শিক্ষকের নৈয়ায়িক-দার্শনিক-মননশীল- বুদ্ধিবৃত্তিক ইমেজের স্টিরিওটাইপ বৃত্তভাঙা এ আখ্যানে রয়েছে মানবিক সংকট ও উত্তরণের ইঙ্গিত। করােনাকালে যখন সমগ্র পৃথিবী নানাভাবে অবরুদ্ধতায় আক্রান্ত, তখন এর নেতিবাচক অভিঘাত এ সম্পর্কেও বাঁকবদল ঘটায়। ড. মুস্তাফিজের চার তলার কানিশ বেয়ে নিচে পড়ে যাবার ব্যাপারটি কি পাগলামি, নাকি গােপন কোনাে ঘটনা মেনে নিতে না পারার জেরে আত্মহত্যা? নাকি কেউ তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিল, অপরাধের সাক্ষ্য লােপাট করতে? মানুষ কি তার স্বপ্নকে কখনাে ছুঁয়ে দিতে পারে জীবনের বৃত্তে? নাকি তাকে অবিরাম রক্তাক্ত হতে হয় প্রবল সংবেদনশীলতার শৃঙ্খলে বন্দী হয়ে? আন্তর্জাতিক সাহিত্যবলয়ের উত্তরাধুনিক ন্যারেটিভকে এ উপন্যাসে বাংলা ভূ-ভাগের ঐতিহ্যবাহী গল্প বলার মৌখিক স্বরের সঙ্গে মেলানাের প্রচেষ্টা রয়েছে। স্বগতােক্তির কাঠামােতে জাদুবাস্তবতা, পরাবাস্তবতা, এক্সপ্রেশনিজম আর বিনির্মাণের প্রভাব অস্বীকারের বদলে বরং এতে সমন্বয়ের প্রয়াস রয়েছে, আখ্যানের দাবির সঙ্গে সঙ্গতি বজায় রেখে। এ উপন্যাসের কোনাে চরিত্রই বাস্তবের কারাে প্রতিনিধিত্ব করে না। যদি কারাে সঙ্গে কোনাে ব্যাপারে সাদৃশ্য অনুধাবন করা যায়, তা নিছক কাকতালীয় বলেই গণ্য হবে।