সত্যজিতের স্রষ্টাবৃত্তি

সত্যজিৎ রায়ের স্রষ্টাবৃত্তি বহুমুখীন। এই মানবদরদী । চলচ্চিত্রসষ্টার বহুমখিনতার নানাদিক নিয়ে লিখিত কিছু। রচনা একত্র করা হয়েছে বর্তমান গ্রন্থে। এইসব রচনা। থেকে মানবজীবন, জগৎ এবং এ-দুয়ের মধ্যকার সম্পর্কে। প্রসঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের দার্শনিক অবস্থান জানা যায় তার। চিন্তাগত কাঠামাের বিবর্তনের ধারাটিও অবিদিত থাকে না। গ্রন্থভক্ত কারাে-কারাে রচনায় সত্যজিতের চলচ্চিত্রকর্মের। বিষয়গত ও রূপগত দিকটির স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে। চলচ্চিত্রকলার অভ্যন্তরীণ উপকরণগুলাের উপর সত্যজিতের। দখল ছিল পুরোমাত্রায়। তিনি দৃশ্যখণ্ড ও শব্দখণ্ডগুলাে ধারণ করাতেন নিজস্ব ধরনে এবং সম্পাদনাকর্মের মাধ্যমে। নির্মিতব্য চলচ্চিত্রটির রূপগত দিকটি তথা আঙ্গিকটি। এমনভাবে দাঁড় করাতেন যাতে তা বিষয়ের উপর খবরদার। করতে না-পারে। এ-বিবেচনাটি মান্য করে বলা যায় যে সত্যজিতের চলচ্চিত্রের বাক-ভঙ্গিমা তার নিজস্ব চলচৈত্রিক। অভিজ্ঞান দ্বারা গঠিত-এই ভঙ্গিমা বাংলা চলচ্চিত্রের। ঘরােয়া সম্পত্তি এবং দেশজ চলচ্চিত্র নির্মাণ রীতির। পরিচায়ক। এই দেশজ রীতিটি তিনি নির্মাণ করেছেন। অন্যান্য শিল্পমাধ্যমের নানা উপাদান চলচ্চিত্রাঙ্গিকে এক সৃষ্টিশীল প্রক্রিয়ার ভিতর দিয়ে অন্বিত করে। যে-প্রক্রিয়ার মধ্যে থেকে তিনি এই অন্বয়ের তথা চলচ্চত্রিক বাক্য। গঠনের কাজটি সমাধা করেছেন বস্তুত সেই প্রক্রিয়ার মধ্যেই তার স্রষ্টাবৃত্তির নানাদিক লুকিয়ে আছে। গ্রন্থভুক্ত। রচনাসমূহে সেই লুকায়িত দিকগুলাের সন্ধান করেছেন। লেখকবৃন্দ তাঁর চলচ্চিত্রকর্মের কারুকৃতি; তার। ব্যক্তি-সমাজ-রাজনীতি-ধর্ম-রাষ্ট্রভাবনা প্রভৃতি বীক্ষণপূর্বক । তারা এই উপলব্ধি ব্যক্ত করেছেন যে সত্যজিত রায়। চলচ্চিত্রকলার নিজস্ব ভাষায় আখ্যানকে দেখিয়ে-শুনিয়ে। "সাহিত্যের চাটত্তি না-করে দশ্য ও শব্দখণ্ডের প্রবাহ দিয়ে। চলচ্চিত্র সৃষ্টি করেছেন এবং এক্ষেত্রে। চিত্র-সংগীত-সাহিত্যবােধ তাঁকে প্রয়োজনীয় প্রাকরণিক ও। পারিচর্যিক উপাদান যুগিয়েছে। এই অনুসন্ধানমূলক। রচনাগুচ্ছ পাঠকর্ম থেকে ধীরে-ধীরে অবয়ব প্রাপ্ত হন এমন এক চলচ্চিত্র-সষ্টা যিনি শুধু বাংলা চলচ্চিত্র নয় বিশ্ব। 'চলচ্চিত্রজেরও এক মহান কারিগর।