রবীন্দ্রনাথ গান্ধী সুভাষ পারস্পরিকতা

রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী এবং সুভাষের মধ্যে বহু বিষয়ে মতানৈক্য ছিল, আবার পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ভালােবাসা স্নেহও যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান ছিল। এই বিষয়গুলি নিয়েই স্বপন পাল এ বইটি লিখেছেন। বইটি পড়ে যে কেউ চিন্তার অনেক খােরাক। পাবেন। রবীন্দ্রনাথের সাথে সুভাষের প্রথম সাক্ষাৎ দিয়ে শুরু করে এ সম্পর্কিত অনেক বিষয়, যথা; রবীন্দ্রনাথ, গান্ধী ও সুভাষের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক, তাঁদের নিজেদের মধ্যে ভুল বােঝাবুঝি এবং যে কারণে কখনাে কখনাে তিক্ততাও সঞ্চারিত হয়েছে, কিন্তু সবকিছু ছাড়িয়ে তাদের তিনজনের মধ্যে যে আন্তরিক সম্পর্ক সেটিকে অস্বীকার করা যায় না; স্বপন পাল সেই বিষয়গুলিই এই বইয়ের মধ্যে তুলে ধরেছেন, অত্যন্ত চমৎকারভাবেই তা করেছেন। তাঁর বইয়ের উপসংহার কয়েকটি মাত্র বাক্যে রচিত হয়েছে ‘আপাত শেষ কথা নাম দিয়ে। তাতে যে কথাগুলাে বর্ণিত আছে, সেই কথাগুলােই এই বইয়ের সর্বত্র চমৎকারভাবে বিবৃত হয়েছে। তকালীন ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসের দুই কিংবদন্তী গান্ধী আর সুভাষ। রাজনীতির এই দুই মানুষের সাথে ওতপ্রােত এক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সাহিত্যের অপ্রতিদ্বন্দ্বী মানুষ কবি সার্বভৌম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।...গান্ধী ও সুভাষ যখন ব্রিটিশের হাত থেকে ভারতের ক্ষমতা নেওয়ার জন্য মরিয়া, সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন, দেশের ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে যুক্ত না করে, তাদেরকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান না করে। শুধুই ক্ষমতার হস্তান্তর স্থায়ী কোনাে সমাধান এনে দিবে না। ...ক্ষমতার বদলে যদি সাধারণ মানুষের সক্রিয় অংশগ্রহণ না থাকে, তবে তা বহৎ মঙ্গলের পক্ষে কাজ করতে পারে না। আজও যদি ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষ ভেঙ্গে যাওয়া রাষ্ট্রগুলাের দিকে তাকাই, তবে তা মর্মে মর্মে বুঝতে পারি। বইটি পাঠের মাধ্যমেই সবাই এই বিষয় সম্পর্কে আরও ভালােভাবে অনুধাবন করতে পারবেন বলেই মনে করি।