মাদারডাঙ্গার কথা (মাওলা)

বাংলাদেশের প্রান্তিক জনজীবনের সঙ্গে কীভাবে জাদুবাস্তবতার অপূর্ব বুননে লৌকিক পীরের অলৌকিক আখ্যান, কৃত্যাচার ও উপনিবেশবাদবিরােধী বিপ্লবী চেতনার ইতিহাস মিশ্রিত রয়েছে—তার উজ্জ্বল একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরেছে এই উপন্যাস। এর কাহিনিটি অনিবার্যভাবে রহস্যঘেরা ও বাস্তব। এই উপন্যাসের কাহিনিতে রহস্যঘেরা লােকজীবনের সঙ্গে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলনে ফকিরসন্ন্যাসী বিদ্রোহীদের ভূমিকা ও অস্তিত্ব রক্ষায় পির-সংস্কৃতির ভেতর তাদের মিলে-মিশে যাওয়ার প্রেক্ষাপট। ঔপনিবেশিক কাল পেরিয়ে পাকিস্তানি বিরােধী সংগ্রাম হয়ে স্বাধীনতা উত্তর-বাংলাদেশে তার গুপ্ত একটি ইতিহাসকে ধারণ করেছে। এতে গ্রামের ছিন্নমূল মানুষের অস্তিত্বের সংগ্রামে বাঙালি নর-নারীদের পাশাপাশি আদিবাসী নর-নারীর জীবনও যুক্ত রয়েছে। এই উপন্যাসের কাহিনি মূলত লােকায়ত ফকির ও দরবেশদের ঐতিহাসিক ভূমিকার কথা তুলে ধরেছে। কেননা, ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত ফকির-দরবেশরা ধর্মীয় সংস্কৃতির পাশাপাশি এদেশের জনগণের। সুখ-দুঃখের শরিক হয়ে সব কালে পাশে থেকেছেন। এমনকি শাসকদের শােষণ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণের সঙ্গে মিলে প্রতিবাদ-প্রতিরােধ গড়ে তুলেছিলেন। এদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে বাংলা অঞ্চলের ফকিরবিদ্রোহ তেমনই একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। পরবর্তীকালে ফকির-দরবেশ নামে পরিচিত এদেশীয় মানুষদের জীবনধারা আর পূর্বের মতাে থাকেনি। ফকির-দরবেশদের নিয়ে অনেক কাহিনি ও গল্প এদেশে সাধারণ মানুষদের মধ্যে প্রচলিত ছিলাে এবং সেগুলো এখনাে গ্রামের বয়ােবৃদ্ধদের মুখে শােনা যায়। সেই সব গল্প-কাহিনির উপাদান নিয়েই এই উপন্যাস মাদারডাঙার কথা।