বনলতা সেন (কবি)

জীবনানন্দের তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বনলতা সেন'। এ বইটি বেরােয় ১৩৪৯ সালের পৌষ (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর) মাসে। ডিমাই আকারে মাত্র ষােলাে পাতার বই এটি। এ বইয়েরও প্রকাশক ছিলেন জীবনানন্দ নিজেই। বইয়ে লেখা ছিল, প্রকাশক – জীবনানন্দ দাশ, বরিশাল। তবে বইয়ের প্রাপ্তিস্থান ছিল—কবিতা ভবন, ২০২ রাসবিহারী এভিনিউ, কলকাতা। | এই ২০২ রাসবিহারী এভিনিউয়ে বুদ্ধদেব বসু তখন থাকতেন এবং এখান থেকেই তাঁর কবিতা পত্রিকাও প্রকাশিত হতাে। বুদ্ধদেববাবু তাঁর এখানকার কবিতা ভবন থেকে তখন ‘এক পয়সায় একটি গ্রন্থমালা বার করতেন। বুদ্ধদেববাবুর এই ‘এক পয়সায় একটি গ্রন্থমালারই অন্যতম বই হয়ে বেরিয়েছিল বনলতা সেন। এই ষােলাে পাতার বইয়ের দাম ছিল তখনকার ষােলাে পয়সা বা চার । আনা। এই বইয়ে কবিতা ছিল মােট ১২টি। কবিতাগুলির নাম এই–বনলতা সেন, কুড়ি বছর পরে, ঘাস, হাওয়ার রাত, আমি যদি হতাম, হায় চিল, বুনাে হাঁস, শঙ্খমালা, নগ্ন নির্জন হাত, শিকার, হরিণেরা, বিড়াল। বুদ্ধদেব বসু তাঁর এক প্রবন্ধে এই বইটির কথা লিখতে গিয়ে বলেছেন— যদিও চার আনা দামের চটি বই এবং এগারােটি মাত্র কবিতা আছে, তবু এটি আমাদের বিশেষভাবে আলােচ্য।—(কালের পুতুল) এ কবি সঞ্জয় ভট্টাচার্যও তাঁর কবি জীবনানন্দ দাশ’ গ্রন্থে লিখেছেন—‘জীবনানন্দের ষােলােটা কবিতা নিয়ে এক পয়সায় একটি সিরিজের পুস্তিকা বেরােয় বনলতা সেন নামে বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ভবন থেকে। দেখা যাচ্ছে, বনলতা সেন গ্রন্থে কবিতার সংখ্যার কথা বলতে গিয়ে, এঁরা উভয়েই ভুল করেছেন। জীবনানন্দ তাঁর বনলতা সেন' কবিতাটির নাম নিয়েই বইটির নামকরণ করেছিলেন—'বনলতা সেন'। বনলতা সেন তাঁর একটি অতি বিখ্যাত কবিতা। এই কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়—কবিতা' পত্রিকার ১ম বর্ষের ২য় সংখ্যায় অর্থাৎ ১৩৪২ সালের পৌষ মাসে। | কবিতা ভবন থেকে প্রকাশিত 'বনলতা সেন' গ্রন্থের ১২টি কবিতাই 'কবিতা' পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। জীবনানন্দ তাঁর প্রথম ও দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কা’কেও কা’কেও উৎসর্গ করলেও এই বইটি কিন্তু কা’কেও উৎসর্গ করেননি। এই ‘বনলতা সেন' বইটি অত্যন্ত চটি ছিল বলেই হয়তাে পরে এই বইটির উপর জীবনানন্দের আকর্ষণ কমে যায়। তাই তিনি এই বইয়ের সবকটি কবিতার সঙ্গে আরও ২৩টি নতুন কবিতা দিয়ে অর্থাৎ মােট ৩৫টি কবিতা একত্র করে, আর একটি বই করলেন এবং সেই বইয়ের নাম দিলেন— 'মহাপৃথিবী।