এক সে মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি

ইটালো ক্যালভিনো যে বলেন, ‘A classic is a book that has never finished saying what it has to say', তা কি জিললুর রহমানকে অনুপ্রাণিত করে দান্তের দ্য ডিভাইন কমেডি-র অসমাপ্ত বক্তব্য উদ্ধারে, নাকি মহাকবির ধরনে মহাকাশ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে ভিন্ন কিছু বলতেই রচেন এ নতুনতর কাব্য এক সে মেরাজের রাত্রে ঘুমিয়েছি? কিন্তু তিনি মেরাজের রাতে কেন ঘুমিয়ে পড়েন এবং নিদ্রিতাবস্থায় স্বপ্নে ঊর্ধ্বমুখী হন? কবির এ স্বপ্নযাত্রা বা মহাকাশভ্রমণ মেরাজের অনুরূপ নয়। তবে তিনি এ কাব্যযাত্রায় সাত আসমান পর্যটনে ব্রতী হন দান্তের মতো নারীপ্রেম বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যক্তিজৈবনিক শক্তির ইশারায় নয় বরং মহামারির ছোবলে মৃত্যুর অভিঘাত —কোভিড-আক্রান্ত স্বজন ও অন্য মানুষদের মৃত্যু —তাঁর দার্শনিক জীবন-জিজ্ঞাসাকে অনিবার্য করে তোলে; মানুষের অকালপ্রয়াণের উদ্দেশ্য বিষয়ে ভাবিত হন তিনি। জিললুর রহমান মোট চৌদ্দ পর্বে সমগ্র কাব্য রচনা করেন লক্ষণীয় প্রতিসাম্যে। তিনি সাত আসমান পর্যন্ত উড়ে যান বিধায় প্রতিটি কবিতাই সপ্তপদী এবং প্রায়ই সমিল সাত মাত্রার মাত্রাবৃত্তে বা মন্দাক্রান্তা ছন্দে বিরচিত; মোট কবিতার সংখ্যা ১২৬, যা ৭ দ্বারা বিভাজ্য। জিললুরের মন্দাক্রান্তা ছন্দের দুই পর্বের প্রতি চরণের মৃদু দোলা হেতু পাঠক যেন স্যাটেলাইট থেকে সারা পৃথিবীকে, এর সমগ্র সাহিত্যিক-শৈল্পিক- সাংগীতিক অতীত সহযোগে দেখতে পান একশ ছাব্বিশটি কবিতার এ মাল্যখানা মহাকাব্যধর্মী দিঘল কবিতাও, যা আমার এ-যাবৎ পঠিত শ্রেষ্ঠ দীর্ঘ কবিতাগুলোর অন্যতম। তা ছাড়া যতদূর জানা যায়, উভয় বাংলায় এমন ধরনের কাব্য এর আগে রচিত হয়নি।