কালের কথা

অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের পরিচয় দেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও পণ্ডিত হিসেবে। পাকিস্তানি আমলে রবীন্দ্রবিরােধী ষড়যন্ত্র প্রতিরােধসহ এদেশের সাংস্কৃতিক স্বাধিকার সংগ্রামে তাঁর অগ্রণী ভূমিকার কথাও আমাদের ইতিহাসের অন্তর্ভুক্ত। পঞ্চাশের দশকে নিউ ভ্যালিউজ পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও আমাদের। মননচর্চার ইতিহাসে তিনি সূত্রধরের ভূমিকা পালন করেছেন। পঠন-পাঠনের তুলনায় তাঁর রচনার পরিমাণ কম। বাংলায় লিখেছেন আরও কম। কিন্তু যখন যা-ই লিখেছেন তাই তাঁর পাণ্ডিত্য ও মননশীলতার দীপ্তিতে উজ্জ্বল। প্রফেসর খান সারওয়ার মুরশিদ নামটি। উচ্চারণেই রুচি ও সংস্কৃতির যে-সংমিশ্রিত রূপটি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে তার প্রতিটি রচনায়ই সেব্যক্তিত্বের উপস্থিতি অনুভূত হয়। চেতনার আন্তরিকতায়, মানসিকতার বৈদগ্ধে, দৃষ্টিভঙ্গির আধুনিকতায় এবং রচনাশৈলীর আভিজাত্যে প্রতিটি প্রবন্ধ বিশিষ্ট। বাংলা গদ্য-সাহিত্যে সঙ্কলনটি একটি মূল্যবান সংযােজন বলে বিবেচিত হবার দাবি রাখে। গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলােতে তার আলােচনার পরিধি অত্যন্ত বিস্তৃত। কখনাে সে আলােচনার বিষয় রাষ্ট্রনীতি, কখনাে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা কিংবা সমাজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পারস্পরিক সম্পর্ক। ইয়েটস ও রবীন্দ্রনাথের তুলনামূলক আলােচনা যেমন করেছেন। তেমনি লিখেছেন ইয়েটসের কবিতায় নারী ও ঈশ্বর নিয়ে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা-ভাবনা, আঁদ্রে মালরাে, শেখ মুজিব ও মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ, তাজউদ্দীনের চিন্তা ও অবদান, লেখকের মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা কিংবা সে-সময়ে। নিহত সহকর্মীর স্মৃতিচারণ, প্রকাশনার সংকট, বিশেষ বই বা নাটকের আলােচনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে এ-গ্রন্থে লেখকের চিন্তা প্রবাহিত হয়েছে। এ ছাড়াও বইটির যা অতিরিক্ত আকর্ষণ তা হলাে ১৯৬১-এর রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে লেখকের সাক্ষাৎকারভিত্তিক একটি দীর্ঘ রচনা। দেশের একজন নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীর চিন্তাচর্চার পরিচয় পেতেই যে শুধু বইটি পাঠককে সাহায্য করবে তা নয়, আমাদের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে বুঝতেও বিশেষ সহায়ক হবে বলে আমাদের ধারণা।