আইন বিষয়ক পদাবলী

রাষ্ট্রভাষা হিসেবে জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা ভাষার। ব্যবহারের কথা বলাই শুধু নয়, ‘আপনি আচরি ধর্ম পরেরে শেখাও' নীতি অনুসরণ করে বাংলা ভাষার সফল প্রয়ােগের দুষ্টান্ত স্থাপন এবং প্রায় একক সাধনা ও একলব্য নিষ্ঠায় বছরের পর বছর এক্ষেত্রে জরুরি কর্তব্যগুলাে যিনি সম্পাদন করে চলেছেন তিনি। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। বায়ান্নের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গের আগুয়ান মিছিলে শরিক, হওয়ার মধ্য দিয়ে যার উদ্বোধন ভাষা সৈনিকের সে। সংগ্রামী চেতনাই যেন পরবর্তীতে এভাবে এক নতুন দায়িত্বশীলতা নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলা ভাষার প্রথম সমার্থক শব্দকোষ যথাশব্দ সংকলন দিয়ে যার সূত্রপাত পরবর্তীতে রবীন্দ্রচর্চা, কোরান-সূত্র ও কোরানশরিফ সরল বঙ্গানুবাদ, আইন শব্দকোষ সম্পাদনা প্রভৃতি অনেকগুলাে গবেষণাধর্মী ও শ্রমসাধ্য কর্মকাণ্ড এবং অসংখ্য প্রবন্ধ-নিবন্ধে মাতৃভাষার পক্ষে ক্লান্তিহীন ও জোরালাে সওয়ালের মধ্য দিয়ে যা আজও অগ্রসরমান। এমন কি তাঁর নিজ কর্মক্ষেত্র ছিল যে বিচার বিভাগ, এবং বাংলা ভাষার প্রয়ােগাধিকার যেখানে সর্বাধিক প্রতিহত, সেখানেও সর্বোচ্চ পদাধিকারী হয়ে তিনি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য সবসময় ছিলেন সােচ্চার, সক্রিয়। আইন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন প্রভৃতি বিষয়ে তিনি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ-পর্যন্ত যে-অজস্র প্রবন্ধ-নিবন্ধাদি লিখেছেন, সভা-সেমিনারে আমন্ত্রিত। হয়ে যত অভিভাষণ দিয়েছেন, এবং বিচ্ছিন্নভাবে তার বিভিন্ন গ্রন্থে ইতােমধ্যে যার অনেকগুলাে স্থানও পেয়েছে, এই প্রথমবারের মতাে কোনাে একক গ্রন্থে তার সবগুলাে সংকলিত হল। বাংলা ভাষায় আইন, সংবিধান বা বিচার ব্যবস্থার মতাে আপাত জটিল বা দুরূহ বিষয়েও যে প্রকৃত জ্ঞান ও গভীর চিন্তাচর্চা সম্ভব, এমন কি সাধারণের বােধােপযােগী সরল-প্রালভাবে তা উপস্থাপনও অসম্ভব নয়, বলা। যেতে পারে বাংলা ভাষার শত্রুদের মুখে ছাই দিয়ে, বর্তমান গ্রন্থভুক্ত রচনাগুলােতে তা প্রমাণ করা।