বাংলাদেশের কথা সাহিত্যে নিম্নবর্গের জীবন

ইতিহাসকে নতুন করে দেখার চেষ্টা থেকে, সমাজের তলানিতে অবস্থানকারী মানুষদেরকে ‘তল থেকে দেখার চেষ্টা থেকে শুরু হয় ভারতবর্ষে নিম্নবর্গের ইতিহাসচর্চা। কালক্রমে এর ঢেউ এসে লাগে সাহিত্যেও। বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত নিম্নবর্গের জীবনসঙ্কটের নানা দিক নিয়ে পরিকল্পিত হয়েছে বর্তমান গ্রন্থ। লেখক কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত নিম্নবর্গের চরিত্রগুলাে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে চরিত্র বিশ্লেষণের প্রচলিত ছকে অগ্রসর হন নি। বরং গ্রামসি, ফুকো কখনাে কখনাে বাখতিনের মতাে জ্ঞান-তাত্ত্বিকেরা আড়ালে থেকে সাহিত্য বিশ্লেষণের পথ দেখিয়েছেন লেখককে। ফলে এ গ্রন্থে সাহিত্য বিশ্লেষণ পেয়েছে নতুন মাত্রা। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন বিদ্যাসাগর অধ্যাপক প্রফেসর পল্লব সেনগুপ্তের ভাষায়: “আসলে, গ্রামশি থেকে শুরু করে এ যাবৎ সাবঅলটার্নদের জীবন ও মনন সম্পর্কে যে-সুজটিল তত্ত্বের বীতংস গড়ে উঠেছে, তাতে তরুণ গবেষকদের পক্ষে বিব্রত বােধ করাই স্বাভাবিক। কিন্তু জনাব হাসানের গবেষণায় সেই বিষন্নতার ছাপ লক্ষিত হয় না। যদিও তিনি রণজিৎ গুহ, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক প্রমুখের তত্ত্বকে যথাযথ অনুধাবন করেছেন এবং যেখানে যেখানে সহমত হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব, সেখানে তা’ তিনি হয়েছেন এবং যেখানে সেটা সম্ভব হয়। নি, সেখানে নম্র বিনয়ে তাঁর ভিন্নমতকে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। সমাজ বিজ্ঞানের বহু তত্ত্বই যে। স্থিতিস্থাপক, সেটা অনেক পণ্ডিতই মানেন না। সুখের কথা গবেষক সে-হেন ‘মৌলবাদিতা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পেরেছেন।” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের প্রফেসর সৈয়দ আজিজুল হক মনে করেন: “বর্তমান অভিসন্দর্ভ ১৯৭১-২০০০ কালপর্বের নিম্নবর্গের জীবনবিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অনেক পাঠক ও গবেষক-প্রাবন্ধিকের জন্য নিঃসন্দেহে নতুন জিজ্ঞাসা ও অভিমুখ তৈরি করবে বলে আমার বিশ্বাস । গবেষকের আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও মানসিক শ্রম প্রশংসনীয়।” রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর সফিকুন্নবী সামাদী বলেন: “এই অভিসন্দর্ভে তিনি বাংলাদেশের কথাসাহিত্যে প্রতিফলিত নিম্নবর্গের শ্রেণী-পেশা-অর্থনীতি-ভাষা-সংস্কৃতি-ধর্মের স্বরূপ বিশ্লেষণ করেছেন। ব্যাখ্যা বিশ্লেষণে গবেষকের মৌলিক চিন্তার স্বাক্ষর লক্ষণীয়। এই গবেষণা কর্ম বাংলাদেশের সাহিত্য-সমালােচনার ক্ষেত্রে একটি শূন্যস্থান পূরণ করবে বলে আমি মনে করি।”