উপন্যাস সমগ্র ১ (বিভূতি) (পতিত পাবন)

বাংলা গদ্য সাহিত্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এক উল্লেখযােগ্য ব্যক্তিত্ব। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পর বাংলা গদ্য সাহিত্যের পরম্পরা যে সমস্ত সাহিত্যিকরা সযত্নে রক্ষা করেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিভূতিভূষণ। তার পাশাপাশি আমরা আর দুই বন্দ্যোপাধ্যায় তারাশঙ্কর এবং মানিকের নাম উল্লেখ করে থাকি। সাহিত্যিক হিসেবে বিভূতিভূষণের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল প্ৰকৃতিতন্ময়তা। প্রকৃতির উন্মুক্ত খেয়ালি খেলাঘরে এক ভবঘুরে মানুষের মত সময় কাটিয়েছিলেন বিভূতিভূষণ। তাই তার সমস্ত চেতনা প্রকৃতির চাকর রসে সম্পৃক্ত হয়ে উঠেছিল। ১৮৯৪ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর বিভূতিভূষণ পৃথিবীর আলাে দেখেন। ছােটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন এক অন্য জগতের মানুষ। তিনি জন্মেছিলেন নদীয়া জেলার একটি ছােট্ট গ্রামে। পরবর্তীকালে কর্মসূত্রে নানা জায়গায় গিয়েছিলেন। বিভূতিভূষণ কিশাের বয়স থেকেই লেখার জগতে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্রে তার একাধিক ছােট গল্প ও উপন্যাস প্রকাশিত হতে থাকে। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি বাংলা গদ্যসাহিত্যের অগ্রগণ্য লেখক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তার লেখা একাধিক উপন্যাস এবং গল্প নিয়ে বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে। বিভূতিভূষণ ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর তারিখে ঘাটশিলায় হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে পরলােক গমন করেন। তার প্রথমা স্ত্রী রমা চট্টোপাধ্যায় এবং দ্বিতীয় স্ত্রী গৌরী দেবীর একমাত্র সন্তান তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলা সাহিত্যের অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরষ্কার রবীন্দ্র পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়েছিল। বিভূতিভূষণের সমস্ত রচনা নিয়ে আমরা তিন খণ্ডে রচনা সমগ্র আপনাদের হাতে তুলে দিতে মনস্থ করেছি। আমরা জানি এখনাে এই পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে বিভূতিভূষণের হাজার হাজার পাঠকপাঠিকা আছেন। তারা যাতে নতুন করে বিভূতিভূষণের সাহিত্যের স্বাদ পান সেজন্যই আমাদের এই প্রয়াস। এই খণ্ডে গ্রন্থিত হয়েছে বিভূতিভূষণের কালজয়ী লেখা ‘পথের পাঁচালী'। প্রসঙ্গত বলা যেতে পারে যে ১৯২৯ সালে প্রকাশিত এই কাহিনী অবলম্বনে বিশ্ববিখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় ‘পথের পাঁচালী’ নামে যে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন তা আন্তর্জাতিক স্তরে যথেষ্ট খ্যাতি এবং সম্মাননা অর্জন করেছিল। অনেকে বলে থাকেন এটি হল স্বাধীনতা উত্তর ভারতের অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র। এই ছবির মাধ্যমে সত্যজিৎ চিরন্তন গ্রামবাংলার একটি বাস্তব জলচ্ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। পথের পাঁচালী উপন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে বিভূতিভূষণ চিরন্তন বাংলার গ্রামীন সভ্যতাকে তার অসামান্য লেখনির মাধ্যমে সিঞ্চিত করে পাঠক পাঠিকার হাতে তুলে দিয়েছেন। এই উপন্যাসের মধ্যে এমনকিছু মানবিক আবেদন আছে যা চিরন্তন।